কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়?

দেশে এখন নামে মাত্র লক্ষ লক্ষ ফ্রিলান্সার, কিন্তু রেগুলার ইনকাম করছে বা ভালো পর্যায়ে আছে এমন ফ্রিলান্সারের সংখ্যা খুবই কম। চলুন আলোচনা করি সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উপায়

এর প্রধান কারণ:

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফ্রিলান্সিং সেক্টরটাকে তুলে ধরা হয়েছে একদম শেষ পর্যায় হিসেবে। লেখাপড়া কম্পলিট করতে পারেন নাই? সমস্যা নেই ফ্রিল্যান্সিং তো আছেই। জব খুঁজতে খুঁজতে দিশে হারা? সমস্যা নেই ফ্রিল্যান্সিং তো আছেই। আরো একদল আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং এর আশায় লেখাপড়াই বাদ দিয়ে বসে।

লেখাপড়া করে কি হবে ফ্রিল্যান্সিং তো আছেই, একটা ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার কিনে নিয়ে বসে পড়লেই ২-১ মাসের ভেতর হাজার হাজার ডলার আসা শুরু হবে। কি এমন কঠিন কাজ কয়দিন দেখলেই পারবো।

এইসব ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে পর্দাপণ করে তাঁরপর আজকে এই বড় ভাই তো কালকে ওই বড় ভাইয়ের টিউটোরিয়াল গাইড লাইন ফলো করতে করতে এক সময় হারিয়ে যায়।

ফ্রিল্যান্সিং এ যদি সফল হতে চান প্রথমেই এইসব ভুল ধারণা মাথা থেকে ছুড়ে ফেলতে হবে। সমাজের আর ১০ টা সম্মানি পেশাকে যেভাবে দেখেন ফ্রিল্যান্সিং কেও সেভাবেই দেখতে হবে। আর ১০ টা পেশাতে যত পরিশ্রম করা লাগে তাঁর থেকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উপায়

  • সর্ব প্রথম ইংরেজীতে পড়তে পারা,বলতে পারা, লিখতে পারা অর্থাৎ কমিউনিকেশন করা জানতে হবে। একদম ফ্লুয়েন্ট ইংরেজী জানতে হবে তা নয়, কিন্তু কাজ চালিয়ে নেবার মতো জ্ঞান থাকতে হবে।
  • কম্পিউটারের ব্যাসিক জানা, যেমন: টাইপিং,অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানা, ট্রাবুল শুটিং ইত্যাদি ব্যাসিক দক্ষতা লাগবে।
  • গুগোল সার্চ জানা, যদি গুগোলের সাথে মনের ভাব আদান প্রদান করতে পারেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে যত বারই হোচট খাবেন তত বারই গুগোলের কাছে গিয়ে মনের কথা প্রকাশ করতে পারবেন, সলিউশন নিতে পারবেন। এই একটা মাত্র স্কিল আপনাকে যে কোন কাজে সাহায্য করতে পারে, গুগোল সার্চ করতে পারলে কোন মেন্টর বা কোন পেইড কোর্স বড় ভাইদের পিছে ছুটতে হবে না।
  • যদি আগে থেকে ঠিক করতে না পারেন কোন কাজে নিজের স্কিল ডেভেলোপ করবেন, আপনার কোন স্কিল সেল করে ডলার ইনকাম করবেন তাহলে আমি বলবো প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে সার্চ করুন,ব্লগ পড়ুন, ভিডিও দেখুন পারলে কিছুদিন শেখার চেষ্টা করুন। তাঁরপর নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার জন্য কোন কাজটি পারফেক্ট আর যখন বুঝতে পারবেন তখন নিজেই যে কোন একটা স্কিল বাছাই করে নিতে পারবেন। ফ্রিলান্সিং এর কোন সেক্টরে কাজ শিখবেন এই বিষয়ে কারো থেকে পরামর্শ ভুলেও নিবেন না। আপনার যে সেক্টর ভালো লাগে সেটাই বাছাই করুন।
  • এবার আপনে জেনে গেছেন কোন বিষয়ে স্কিল ডেভেলোপ করবেন। এখন নিদিষ্ট একটা সময়ের জন্য মাইনসেট তৈরি করে ফেলুন। এই সময়ের মধ্যে যত যাই হোক না কেন আপনি স্কিল ডেভেলোপ করা ছেড়ে দিবেন না। প্রতিদিন রুটিনমাফিক চর্চা চালিয়ে যাবেন। আপনে যেই সেক্টরেই স্কিল ডেভেলোপ করেন না কেন, কমপক্ষে ১ বছর সময় হাতে নিয়ে নামবেন, এই ১ বছরের মধ্যে কোন ডলার ইনকাম করার চিন্তাও মাথায় আনবেন না।
  • স্কিল ডেভেলোপ করার পাশাপাশি আপনে যেই সেক্টরে স্কিল ডেভেলোপ করছেন সেই সেক্টরের ফেসুবুক গ্রুপ গুলোতে জয়েন করুন, বিভিন্ন ফোরামে একটিভ থাকুন, ভালো কিছু ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগ ফলো করুন।

ফ্রিলান্সিং এ সফল হবার মন্ত্র একটাই, ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকা। এভাবে ১ বছর আগে চর্চা চালিয়ে চান, তাঁরপর আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আপনে নিজেই ভালো দিতে পারবেন।

কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়?

প্রথমে অপরিচিত কোন এক ভাইয়ের লেখা উক্তি দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছি। উক্তিটি ঠিক এরকম

সফল মানুষ জনতার

ব্যর্থ মানুষ নিজেরও না!

কি বুঝলেন কথাটি থেকে? আশাকরি কমেন্টে জানাবেন।

এবার আসি আপনার প্রশ্নের উত্তরে।

সফলতার সংজ্ঞাটা আসলে কি গাড়ি-বাড়ি, কোটি কোটি টাকা, সম্পত্তি নাকি অন্য কিছু। হয়তো এখানে প্রশ্নকর্তা গাড়ি-বাড়ি আর কোটি কোটি টাকার কথাই বুঝাতে চেয়েছেন। আমিও ঠিকই আপনার কথা বুঝতে পেরেছি, তারপর একটু জানতে চাইলাম আর কি। কিভাবে এত টাকা রোজগার করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিং থেকে। চলুন, এক এক করে উপায়গুলো জেনে নিই।

  • আপনার পেশন খুঁজে বের করুন। সেই বিষয়ে নিজেকে একজন মাস্টারপিস হিসেবে গড়ে তুলুন।
  • এই মাস্টার পিস হবার জন্য অবশ্যই ধৈর্য,অধ্যাবসায়, পরিশ্রম, লেগে থাকা,সময় দেয়া অনিবার্য।
  • নিজেকে প্রতিমুহূর্তে ভাঙ্গুন এবং গড়ুন। নিশ্চয়ই বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখেছেন। সে সকল খেলায় প্রতিবছর কোন না কোন রেকর্ড তৈরি হয় এবং কোন না কোন রেকর্ড ভাঙ্গে। এরকমভাবে নিজেকেও ভাঙ্গুন এবং গড়ুন, যাতে দক্ষতার শীর্ষে পৌঁছার ক্ষমতা হয় আপনার।
  • আপনার পছন্দের বিষয়ে আপনি এমন ভাবে শিখে ফেলুন, যেন ওই বিষয়ে আর কোনো প্রশ্নই না থাকে। আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তবে তা যেন প্রযুক্তির কল্যাণে নতুনভাবে তৈরি হয়। যা আগে ছিল না।
  • সময়, ধৈর্য, আর সততার সাথে কাজ করুন। সফলতা আসবে। আজ করে কাল সফল এ ভাবনা থেকে বিদায় নিন।
  • ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে কাজ করার আগে ন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করুন। তাহলে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। কেননা আপনি যদি ন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্ট কে খুশি করতে না পারেন তবে কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েনকে খুশি করে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসবেন।

প্রতিদিন অল্প একটু সময় করে হলেও,

সফল ব্যক্তিদের শুধু সফলতা নয় তাদের বায়োগ্রাফি গুলো পড়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন প্রতিটি সফল ব্যক্তিত্বের পেছনে রয়েছে হাজারো ভাঙ্গা-গড়া, ওঠা-পড়া, পারা-না পারা। শুধু তারা হাল ছেড়ে দেয়নি তাই আজ তারা সফল।

হয়তো হাল না ছেড়ে দিয়ে আপনিও হতে পারেন আগামী দিনের কোন সফল ব্যক্তিত্ব। আজ রইলাম, আগামী দিনের কোন সফল ব্যক্তিত্বের প্রত্যাশায়।