ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পরিচিতি-যা কিছু জানা প্রয়োজন

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?

আমাদের প্রথমে জানতে হবে যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? স্বাভাবিক ভাসায় বলতে গেলে ইন্টারনেট (প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) এর জন্য যে সকল ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয় এগুলো প্রবর্তন করার কৌশল অবলম্বন করাকে বলে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। আমরা অনেকে আছি যারা এখনো জানিনা যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আর ওয়েব ডিজাইনিং কি।আসলে এইটা কিন্ত এক না অনেক পার্থক্য রয়েছে।

ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর পার্থক্য কি?

ওয়েব ডিজাইন: ওয়েব ডিজাইন হলো আমরা কোনো ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করার পর আমাদের ব্রাউজারে যা দেখতে পাই সেটাই মূলত ওয়েব ডিজাইন।এইভাবেও বুঝতে পারেন যে আপনি একটা ওয়েব সাইটের নিউজফেডে অনেক ধরনের নিউজ দেখতে পেলেন সেটাই হচ্ছে মূলত ওয়েব সাইটের ডিজাইন।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো প্রোগ্রামিং এবং কোডিং এর মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপাররা প্রতিনিয়ত একটি ওয়েবসাইটকে চালু করে রাখে।ওযেব ডেভেলপারদের কাজের পরিধি ব্যাপক।

যে কোনো সাধারণ মানের স্ট্যাটিক ওয়েব পেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম,ই-কমার্স, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং আরও সকল নিত্য ব্যবহার্য জিনিস,যে গুলো আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করি, এগুলোর প্রায় সবকিছুই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমেই তৈরি হয়। ধরুন,ইউটিউবে আমরা লাইক বাটনটিতে ক্লিক করলে বা কমেন্ট করলে সেখানে নাম্বার কাউন্ট করে,কয়টা লাইক কমেন্ট হয়েছে ইত্যাদি আর এটাই হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।

ওয়েব ডিজাইন শিখবেন নাকি ডেভেলপমেন্ট? এক কথায় বলবো আপনি যদি ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) হন আপনার চয়েস গুলো যদি হাজার জনের চেযে সুন্দর হয় তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইনিং এ ভালো করতে পারবেন কেন না মার্কেটে একশ জন ডেভেলপার এর বিপরীতে একজন ডিজাইনার লাগে। তার মানেই বুঝতেই পারছেন ডিজাইনিং সেক্টর প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অন্যদিকে ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য অত বেশি ক্রিয়েটিভ হওয়া লাগে না

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার জন্য আপনার কি কি দক্ষতার প্রয়োজন তা জেনে নিন:

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার জন্য তাহলে কি এখন ৪বছরের অর্নাস কোর্সে ভর্তি হতে হবে?কম্পিউটার সায়েন্সের ছাএ হতে হবে? উওরটি হচ্ছে না। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট মূলত একটি দক্ষতা সৃজনশীল পেশা। HTML,CSS,এবং Javascript, PHP, Database এর মতো দক্ষতা গুলো অর্জন করতে পারবেন।

কিভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখব ঘরে বসে? শিখার জন্য অনলাইনে রযেছে প্রচুর রির্সোস। আপনি গুগলে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখার প্রচুর টিউটোরিয়াল আবার ফ্রিতে আপনি #W3s school এর মতো কিছু ওযেব সাইটের মাধ্যমে বিনামূল্যেও HTMl,CSS,JAVASCRIPT টিউটোরিয়াল গুলো শিখতে পারবেন।

ইন্টারনেট কন্টেন্ট খোঁজার ক্ষেত্রে

আপনাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হচ্ছে সার্চ করতে শিখুন। আমরা অনেকেই শর্টকাট রাস্তায় উপার্জন করতে অনিশ্চিতার এবং আয় হলেও পরিমাণে স্বল্প কিছু সময় নিয়ে ধৈর্য ও পরিশ্রমের সাথে নিজেকে একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হিসেবে তৈরি করতে পারলে, আপনাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

আপনি ইন্টারনেটের যেকোনো তথ্য যত দক্ষতার সঙ্গে যত দ্রুত খুঁজে বের করতে পারবেন। আপনার শেখার সুযোগটাও তত বিস্তর হবে।বিনামুল্যে কোনো কিছু শিখার জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই।তাই বলছি সার্চ করতে শিখুন।

ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে কত প্রকারে ভাগ করা যায?

কাজের পরিধি অনুযায়ী ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

1. ক্লায়েন্ট সাইড কোডিং

2.র্সাভার সাইড কোডিং

3. ডাটাবেইজ প্রযুক্তি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর তিনটি ভাগ সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত দিলাম।

1.ক্লায়েন্ট সাইড: ক্লায়েন্ট সাইড স্ক্রিপ্টিং বলতে ওয়েব সাইটের ইউজারদের প্রান্তকেই নির্দেশ করে।একে অনেক সময় ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট বলা হয়ে থাকে। ক্লায়েন্ট সাইড বা ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেসব বিষয়কে নিদের্শ করে যেগুলোতে আমরা ব্যবহারকারীরা সরাসরি সম্পৃক্ত।

2.র্সাভার সাইড: যে কোনো ওয়েবসাইটের ভিতরে যা চলে সেটিকে বলা হয় সাইড স্ক্রিপ্টিং। সাইড স্ক্রিপ্টিংকে অনেক সময় ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্টও বলা হয়ে থাকে। এই ব্যাক এন্ড একটি ওয়েবসাইটের অপরিহার্য অংশ কিন্ত ওয়েবসাইটের ইউজার বা ব্যবহারকারীর এটি দেখতে পান না। ওয়েব সাইটের ভিতরের ডেটা ও তথ্যসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং গোছানো রাখে এবং ক্লায়েন্ট বা ইউজারদের সাইডে সব কিছু সাধারণভাবে চালানো এর পূর্ন দায়িত্ব থাকে সার্ভার সাইডের উপর।

3.ডাটাবেজ প্রযক্তি: যে কোনো ওয়েবসাইট পরিচলনার ক্ষেএে ডাটাবেজের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবেনা। একটি ওয়েবসাইটের ভাল মন্দ অনেক সময় ডাটাবেজর উপরেও নির্ভর করে। ওয়েবসাইটের এই ডাটাবেজ গুলোতে একটি ওয়েবসাইট ঠিক মতো পরিচলনা করার জন্য যাবতীয় ফাইল সংরক্ষণ বা সেইভ করা হয়ে থাকে। এই ডাটাবেজ মূলত কোনো একটি সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকে। আমাদের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই রিলেশনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে।এই তিনটি ভাগের সমন্বয়ে একটি ওয়েবসাইট কাজ করে।এদিকে একটির কোনো ত্রুটির ফলে বিশাল ক্ষতি সৃষ্টি হতে পারে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট যেহেতু একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ তাই এটিতে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন হবে।তাই আপনার ভাল সৃজনশীল চিন্তা শক্তি থাকতে হবে।

ওয়েব সাইট মূলত কত ধরনের?

ওয়েবসাইটকে বিষয় ভিওিক দিক না। উপায়েই ভাগ করা সম্ভব। কিন্ত ওয়েবসাইটের গঠন প্রকৃতির দিক থেকে হিসাব করলে ওয়েবসাইট মূলত ২প্রকার একজন ওয়েব ডেভেলপারকে মূলত এই দুই ধরনের ওয়েবসাইট নিয়েই জানতে হয় যেমন

১.স্ট্যাটিক ওযেবসাইট

২.ডায়নামিক ওয়েবসাইট

1.স্ট্যাটিক: যে সকল ওয়েবসাইটের ডেটার মান ওয়েব পেজ লোডিং বা চালু করার পর পরিবর্তন করা যায় না তাকে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট বলে।

2.ডায়নামিক: যে সকল ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ওয়েব সাইট চালু অবস্থায় পরিবর্তন করা যায় অর্থাৎ কোড পরিবর্তন না করেই কন্টেন্ট যুক্ত, ডিলিট এবং আপডেট করা যায় তাকে ডায়নামিক ওয়েব সাইট বলে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে কি কি লাগবে?

১.ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে হলে সবার আগে আপনার একটি নিজস্ব কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ডিভাইস প্রয়োজন হবে। তাই শুরুতে এটির ব্যবস্হ্য করে নিন।

২.আপনাকে একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হতে হলে আপনার প্রচুর ধৈর্য শক্তি ও মনোযোগ প্রয়োজন হবে

৩.ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সহ যেকোনো কাজ শিখার জন্য আপনার হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় থাকতে হবে।কারন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট খুব সুক্ষ একটি কাজ।

৪.ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর আগে ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে হাল্কা ধারনা রাখতে হবে। তাই Adobe Photoshop সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা থাকতে হবে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে কি কি দক্ষতার দরকার বা কোন কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখবো ?

Markup Language: HTML ,XML, CSS Responsive design

Framework : Bootstrap-css frame work, React- JS Frame work

Programming languages Javascript, PHP, Python, .NET

CMS- Wordpress -Joomla -Drupal -Magento

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখে কি করে আয় করবো?

প্রথমে বলে নিচ্ছি ইন্টারনেটে চাকরি এবং ব্যবসা দুটিই করা যায় আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে দেখে থাকি।আবার অনেকর প্রশ্ন ইন্টারনেটে চাকরি ও করা যায় আবার ব্যবসাও কিন্তু কিভাবে। বিষয়টা তখনি আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে আমরা যদি এই ভাবে চিন্তা করি সাধারনত আমাদের জীবনে চাকরির জন্য আমরা কি করি।

আমাদের ব্যবহারিক জীবনের জন্য যে সিস্টেমটা ফলো করা হয় ধরুন আপনি ডাক্তার হলে ডাক্তারি ইন্জিনিয়ার হলে ইন্জিনিয়ারিং উকিল হলে লৌ। ইত্যাদি বিষয়ের উপর লেখা পড়া করে দক্ষতা অর্জন করতে হয় এরপরে চাকরি পাওয়ার জন্য ঐ বিষয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাই সেখানে ইন্টারভিউ দিই এবং আমাদের দক্ষতার প্রবল দেই।

তারপর সেই কৃত্যপক্ষ জানেন যে আপনি এই কাজের জন্য দক্ষ তখন তিনি এই ভিওিতে আমাদের চাকরি দিবেন। এই হচ্ছে আমাদের চাকরি করার নিয়ম। তো অনলাইনে ও ঠিক একই ভাবে এই চাকরি করা যায়। এখানে চাকুরি করতে হলেও আপনাকে কোনো বিষের উপর দক্ষতা থাকতে হবে।

কাজ পেতে কি করনীয়ঃ

আপনার নিজের করা পূর্বের কাজের উদাহরণ দেখাতে হবে আপনার ক্লায়েন্টকে।এটাকে পোর্টফোলিও বলে। আপনার পোর্টফোলিও যত বেশি প্রফেশনাল হবে আপনি তত বেশি প্রফেশনাল হবে এবং তাড়াতাড়ি কাজ পাবেন।

আমি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখলাম আমায় ইন্টারনেটে কাজটা দিবে কি?আমি চাকরিটা কথাই করবো?

এই সে স্টেটমেন্টা হচ্ছে বাস্তব জীবনে ডাক্তারি করার জন্য যেমন হাসপাতালে যেতে হয় উকালতির করার জন্য কোর্টে যেতে হয় শিক্ষকতা করার জন্য স্কুলে যেতে হয় তো ঠিক একই ভাবে ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য বেশ কিছু মার্কেটপ্লেজ আছে। ওয়েব ডিজাইন বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অনলাইনের অনেক বড় একটি সেক্টর তো তা শিখার জন্য হোক বা অনলাইনে উপর্জন করার জন্য হোক আপনাকে এই সম্পর্কে অনেক দক্ষতা থাকতে হবে।

শেষ কথা:

ক্যারিয়র নিয়ে চিন্তা?ওয়েব ডেভেলপার হয়ে সফল হতে হবে। যদি আপনি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হতে চান তাহলে সবার আগে আপনার ধৈর্য । বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডিমান্ডিং পেশাগুলোের একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।এই লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকলে আপনার আপনি ইতিমধ্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে গেছেন।