রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা । বাছাই করা ৫০+ কবিতা

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে। রয়েছ নয়নে নয়নে, হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে। হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা গুলো চির  অমর হয়ে আছে। যেগুলো আজকের জেনারেশন মনে প্রানে বিশ্বাস করে বুকে ধারণ করে। প্রিয়তমা কে মনের কথা জানাতে অনেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাগুলোকে উৎসর্গ করে। আজকে আমি আপনাদের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু প্রেমের কবিতা নিয়ে লিখতে বসলাম যেগুলো সবসময় জনপ্রিয় এবং মানুষের অন্তরের মধ্যে এখনো বিরাজমান। 

 

আপনি কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সঙ্গে দারুণ সকল, রোমান্টিক, সুন্দর চমৎকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা শেয়ার করব। যা আপনার নিকট অনেক বেশ ভালো লাগবে বলে আমি প্রার্থনা করছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।

বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।

সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি
যতো জানি ততো জানি নে।

জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবন কালে রচনা করেছেন অঢেল কবিতা। তাঁর কবিতায় ঠাঁই পেয়েছে বিচিত্র বিষয় বিচিত্র সোশ্যাল দিক। সেই রকম প্রেমের বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের রচনায় ১টি বৃহৎ অংশ জুড়ে আছে। প্রেমের বিষয়টি তার রচনায় এতই বৃহৎ যে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রেমের কথা তার কবিতায় উপন্যাসে বা নাটকে দেখতে পাই। মানবপ্রেম হতে চালু করে চেহারা প্রেম, ঈশ্বর প্রেম, আধ্যাত্মিক প্রেম সবগুলি তাঁর রচনায় পরিলক্ষিত হয়। প্রেম, ভালোবাসার যে ভাব গুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়া সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় তা হয়তো অন্য কবির বেলায় পরম বিরল। এজন্য রবীন্দ্রনাথকে প্রেমিক কবি ও বলা হয় থাকে। তাই তার কয়েকটি বিশিষ্ট প্রেমের কবিতা নিচে দেওয়া হল।

 

অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


জোড়াসাঁকো ২ ভাদ্র  ১৮৮৯

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।

চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,

নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।

যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,

অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।

আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে–
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।

আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।

নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি–
সকল কালের সকল কবির গীতি

 

স্মৃতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কাব্যগ্রন্থ- কড়ি ও কোমল

ওই দেহ-পানে চেয়ে পড়ে মোর মনে
যেন কত শত পূর্বজনমের স্মৃতি।

সহস্র হারানো সুখ আছে ও নয়নে,
জন্ম-জন্মান্তের যেন বসন্তের গীতি।

যেন গো আমারি তুমি আত্মবিস্মরণ,
অনন্ত কালের মোর সুখ দুঃখ শোক,
কত নব জগতের কুসুমকানন,
কত নব আকাশের চাঁদের আলোক।

কত দিবসের তুমি বিরহের ব্যথা,
কত রজনীর তুমি প্রণয়ের লাজ,
সেই হাসি সেই অশ্রু সেই সব কথা
মধুর মুরতি ধরি দেখা দিল আজ।

তোমার মুখেতে চেয়ে তাই নিশিদিন
জীবন সুদূরে যেন হতেছে বিলীন।

ধ্যান – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


নিত্য তোমায় চিত্ত ভরিয়া
স্মরণ করি,
বিশ্ববিহীন বিজনে বসিয়া
বরণ করি;
তুমি আছ মোর জীবন মরণ
হরণ করি।

তোমার পাই নে কূল–
আপনা-মাঝারে আপনার প্রেম
তাহারো পাই নে তুল।

উদয়শিখরে সূর্যের মতো
সমস্ত প্রাণ মম
চাহিয়া রয়েছে নিমেষ-নিহত
একটি নয়ন-সম–
অগাধ অপার উদাস দৃষ্টি,
নাহিকো তাহার সীমা।

তুমি যেন ওই আকাশ উদার,
আমি যেন ওই অসীম পাথার,
আকুল করেছে মাঝখানে তার
আনন্দপূর্ণিমা।

তুমি প্রশান্ত চিরনিশিদিন,
আমি অশান্ত বিরামবিহীন
চঞ্চল অনিবার–
যত দূর হেরি দিক্দিগন্তে
তুমি আমি একাকার।

 

পূর্ণতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



স্তব্ধরাতে একদিন নিদ্রাহীন
আবেগের আন্দোলনে তুমি
বলেছিলে নতশিরে অশ্রুনীরে
ধীরে মোর করতল চুমি–
“তুমি দূরে যাও যদি,
নিরবধি
শূন্যতার সীমাশূন্য ভারে
সমস্ত ভুবন মম
মরুসম
রুক্ষ হয়ে যাবে একেবারে।
আকাশবিস্তীর্ণ ক্লান্তি
সব শান্তি
চিত্ত হতে করিবে হরণ–
নিরানন্দ নিরালোক
স্তব্ধ শোক
মরণের অধিক মরণ।’


শুনে, তোর মুখখানি
বক্ষে আনি
বলেছিনু তোরে কানে কানে–
“তুই যদি যাস দূরে
তোরি সুরে
বেদনা-বিদ্যুৎ গানে গানে
ঝলিয়া উঠিবে নিত্য,
মোর চিত্ত
সচকিবে আলোকে আলোকে।
বিরহ বিচিত্র খেলা
সারা বেলা
পাতিবে আমার বক্ষে চোখে।
তুমি খুঁজে পাবে প্রিয়ে,
দূরে গিয়ে
মর্মের নিকটতম দ্বার–
আমার ভুবনে তবে
পূর্ণ হবে
তোমার চরম অধিকার।’


দুজনের সেই বাণী
কানাকানি,
শুনেছিল সপ্তর্ষির তারা;
রজনীগন্ধার বনে
ক্ষণে ক্ষণে
বহে গেল সে বাণীর ধারা।
তার পরে চুপে চুপে
মৃত্যু রূপে
মধ্যে এল বিচ্ছেদ অপার।
দেখাশুনা হল সারা,
স্পর্শহারা
সে অনন্তে বাক্য নাহি আর।
তবু শূন্য শূন্য নয়,
ব্যথাময়
অগ্নিবাষ্পে পূর্ণ সে গগন।
একা-একা সে অগ্নিতে
দীপ্তগীতে
সৃষ্টি করি স্বপ্নের ভুবন।

অচির বসন্ত হায় এল, গেল চলে  – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


অচির বসন্ত হায় এল, গেল চলে–
এবার কিছু কি, কবি করেছ সঞ্চয়।

ভরেছ কি কল্পনার কনক-অঞ্চলে
চঞ্চলপবনক্লিষ্ট শ্যাম কিশলয়,
ক্লান্ত করবীর গুচ্ছ। তপ্ত রৌদ্র হতে
নিয়েছ কি গলাইয়া যৌবনের সুরা–
ঢেলেছ কি উচ্ছলিত তব ছন্দঃস্রোতে,
রেখেছ কি করি তারে অনন্তমধুরা।

এ বসন্তে প্রিয়া তব পূর্ণিমানিশীথে
নবমল্লিকার মালা জড়াইয়া কেশে
তোমার আকাঙক্ষাদীপ্ত অতৃপ্ত আঁখিতে
যে দৃষ্টি হানিয়াছিল একটি নিমেষে
সে কি রাখ নাই গেঁথে অক্ষয় সংগীতে।
সে কি গেছে পুষ্পচ্যুত সৌরভের দেশে।

কৃষ্ণকলি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

 

মিলন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো — আমার
জুড়ালো হৃদয় প্রভাতে।
আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
পরান কী নিধি কুড়ালো — ডুবিয়া
নিবিড় নীরব শোভাতে।
আজ গিয়েছি সবার মাঝারে, সেথায়
দেখেছি একেলা আলোকে — দেখেছি
আমার হৃদয়-রাজারে।
আমি দু-একটি কথা কয়েছি তা-সনে
সে নীরব সভা-মাঝারে — দেখেছি
চিরজনমের রাজারে।

ওগো, সে কি মোরে শুধু দেখেছিল চেয়ে
অথবা জুড়ালো পরশে — তাহার
কমলকরের পরশে —
আমি সে কথা সকলি গিয়েছি যে ভুলে
ভুলেছি পরম হরষে।
আমি জানি না কী হল, শুধু এই জানি
চোখে মোর সুখ মাখালো — কে যেন
সুখ-অঞ্জন মাখালো —
কার আঁখিভরা হাসি উঠিল প্রকাশি
যে দিকেই আঁখি তাকালো।

 

 

আজ মনে হল কারে পেয়েছি — কারে যে
পেয়েছি সে কথা জানি না।
আজ কী লাগি উঠিছে কাঁপিয়া কাঁপিয়া
সারা আকাশের আঙিনা — কিসে যে
পুরেছে শূন্য জানি না।
এই বাতাস আমারে হৃদয়ে লয়েছে,
আলোক আমার তনুতে — কেমনে
মিলে গেছে মোর তনুতে।
তাই এ গগনভরা প্রভাত পশিল
আমার অণুতে অণুতে।
আজ ত্রিভুবন-জোড়া কাহার বক্ষে
দেহ মন মোর ফুরালো — যেন রে
নিঃশেষে আজি ফুরালো।
আজ যেখানে যা হেরি সকলেরি মাঝে
জুড়ালো জীবন জুড়ালো — আমার
আদি ও অন্ত জুড়ালো।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যাপ্ত সনামধন্য একজন কবি। উনি বিশ্বকবি হিসাবেও পরিচিত। তার লিখনি প্রচুর ছড়া এবং কবিতা রয়েছে। এসকল কবিতা সমগ্রহের ভিতরে অনেকগুলো রোমান্টিক, ভালোবাসা, প্রেমের কবিতাও আছে। আর্টিকেলটিতে কারণ ছাড়া সকল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কাব্য পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন কবিতাগুলো দেখে নেওয়া যাক। সর্বসেরা সকল কবিতাগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার চেস্টা করব।

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,
নয় তো হীনবল-
শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে
ফেলবে অশ্রুজল।
মন্দমধুর সুখে শোভায়
প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।
তোমার সাথে জাগতে সে চায়
আনন্দে পাগল।

নাচ যখন ভীষণ সাজে
তীব্র তালের আঘাত বাজে,
পালায় ত্রাসে পালায় লাজে
সন্দেহ বিহবল।
সেই প্রচন্ড মনোহরে
প্রেম যেন মোর বরণ করে,
ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার
দিক সে রসাতল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের ছড়া যুগে যুগে আমাদের মন ছুয়ে গেছে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কাব্য মধ্য যুগে যে রকম চর্চা করা হতো বর্তমানেও সেভাবে চর্চা করা হচ্ছে। Rabindranath Thakur Kobita এর মধ্যে প্রেমের কবিতাগুলো মানুষের নিকট বহু জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আজ আমরা Rabindra Thakur Kobita থেকে একমাত্র বাছাই করা সর্বসেরা প্রেমের কবিতা গুলো শেয়ার করেছি।

 

অকর্মার বিভ্রাট

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


লাঙল কাঁদিয়া বলে ছাড়ি দিয়ে গলা,
তুই কোথা হতে এলি ওরে ভাই ফলা?
যেদিন আমার সাথে তোরে দিল জুড়ি
সেই দিন হতে মোর মাথা-খোঁড়াখুঁড়ি।
ফলা কহে, ভালো ভাই, আমি যাই খ’সে,
দেখি তুমি কী আরামে থাক ঘরে ব’সে।
ফলাখানা টুটে গেল, হল্খানা তাই
খুশি হয়ে পড়ে থাকে, কোনো কর্ম নাই।
চাষা বলে, এ আপদ আর কেন রাখা,
এরে আজ চালা করে ধরাইব আখা।
হল্ বলে, ওরে ফলা, আয় ভাই ধেয়ে–
খাটুনি যে ভালো ছিল জ্বলুনির চেয়ে।

১৪০০ সাল

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!
আজি নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের
লেশমাত্র ভাগ,
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
আজিকার কোনো রক্তরাগ-
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
তোমাদের করে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে?
তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার
বসি বাতায়নে
সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি
ভেবে দেখো মনে-
একদিন শতবর্ষ আগে
চঞ্চল পুলকরাশি কোন্ স্বর্গ হতে ভাসি
নিখিলের মর্মে আসি লাগে,
নবীন ফাল্গুনদিন সকল-বন্ধন-হীন
উন্মত্ত অধীর,
উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণুগন্ধমাখা
দক্ষিণসমীর
সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দেয়েছে ধরা
যৌবনের রাগে,
তোমাদের শতবর্ষ আগে।
সেদিন উতলা প্রাণে, হৃদয় মগন গানে,
কবি একা জাগে-
কত কথা পুষ্প প্রায় বিকশি তুলিতে চায়
কত অনুরাগে,
একদিন শতবর্ষ আগে।
আজি হতে শতবর্ষ পরে
এখন করিছে গান সে কোন্ নুতন কবি
তোমাদের ঘরে!
আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন
পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।
আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে
ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে-
হৃদয়স্পন্দনে তব, ভ্রমরগুঞ্জনে নব,
পল্লবমর্মরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে।
রবীন্দ্রনাথের প্রেমের পদ্য লিখেছিলেন “ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনেরও মন্দিরে”। উনি এই ধরনের কথা বলেছিলেন কেন না আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত অগাধ হয় এবং বিশেষ কারো সঙ্গে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া হয়।

অভিমান

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ!
বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ।
যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ,
কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান।
যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি,
কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি।
যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ
তারি কাছে তারি ‘পরে তোমার নালিশ!
নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে,
পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে–
তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্,
সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক।
একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল,
অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল।

দান

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কাঁকন-জোড়া এনে দিলেম যবে,
ভেবেছিলেম, হয়তো খুশি হবে।
তুলে তুমি নিলে হাতের ‘পরে,
ঘুরিয়ে তুমি দেখলে ক্ষণেক-তরে,
পরেছিলে হয়তো গিয়ে ঘরে –
হয়তো বা তা রেখেছিলে খুলে।
এলে যেদিন বিদায় নেবার রাতে
কাঁকনদুটি দেখি নাই তো হাতে,
হয়তো এলে ভুলে।।
দেয় যে জনা কী দশা পায় তাকে,
দেওয়ার কথা কেনই মনে রাখে!
পাকা যে ফল পড়ল মাটির টানে
শাখা আবার চায় কি তাহার পানে।
বাতাসেতে-উড়িয়ে-দেওয়া গানে
তারে কি আর স্মরণ করে পাখি?
দিতে যারা জানে এ সংসারে
এমন ক’রেই তারা দিতে পারে
কিছু না রয় বাকি।।
নিতে যারা জানে তারাই জানে,
বোঝে তারা মূল্যটি কোনখানে।
তারাই জানে, বুকের রত্নহারে
সেই মণিটি কজন দিতে পারে
হৃদয় দিতে দেখিতে হয় যারে –
যে পায় তারে সে পায় অবহেলে।
পাওয়ার মতন পাওয়া যারে কহে
সহজ ব’লেই সহজ তাহা নহে,
দৈবে তারে মেলে।।
ভাবি যখন ভেবে না পাই তবে
দেবার মতো কী আছে এই ভবে।
কোন্ খনিতে কোন্ ধনভান্ডারে,
সাগর-তলে কিম্বা সাগর-পারে,
যক্ষরাজের লক্ষমণির হারে
যা আছে তা কিছুই তো নয় প্রিয়ে!
তাই তো বলি যা-কিছু মোর দান
গ্রহণ করেই করবে মূল্যবান
আপন হৃদয় দিয়ে।

প্রথম চুম্বন

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


স্তব্ধ হল দশ দিক নত করি আঁখি
বন্ধ করি দিল গান যত ছিল পাখি।
শান্ত হয়ে গেল বায়ু, জলকলস্বর
মুহূর্তে থামিয়া গেল, বনের মর্মর
বনের মর্মের মাঝে মিলাইল ধীরে।
নিস্তরঙ্গ তটিনীর জনশূন্য তীরে
নিঃশব্দে নামিল আসি সায়াহ্নচ্ছায়ায়
নিস্তব্ধ গগনপ্রান্ত নির্বাক্ ধরায়।
সেইক্ষণে বাতায়নে নীরব নির্জন
আমাদের দুজনের প্রথম চুম্বন।
দিক্-দিগন্তরে বাজি উঠিল তখনি
দেবালয়ে আরতির শঙ্খঘণ্টাধ্বনি।
অনন্ত নক্ষত্রলোক উঠিল শিহরি,
আমাদের চক্ষে এল অশ্রুজল ভরি।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা বহুবর্ণময়। তার কাব্য কক্ষনো রক্ষণশীল ধ্রুপদি শৈলীতে, কখনও হাস্যোজ্জ্বল লঘুতায়, কখনও বা দার্শনিক গাম্ভীরে, আবার কক্ষনো বা আনন্দের উচ্ছ্বাসে মুখরিত। এই কাব্যগুলির সোর্স পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে রচিত বৈষ্ণব কবিদের পদাবলি সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কাব্যে অগাধ প্রভাব বিস্তার করেন উপনিষদ রচয়িতা ঋষিকবিগণ।

অন্তর মম বিকশিত করো

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তরতর হে।
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,
সুন্দর কর হে।
জাগ্রত করো, উদ্যত করো,
নির্ভয় করো হে।
মঙ্গল করো, নরলস নিঃসংশয় করো হে।
অন্তর মম বিকশিত করো,
অন্তরতর হে।
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
মুক্ত করো হে বন্ধ,
সঞ্চার করো সকল মর্মে
শান্ত তোমার ছন্দ।
চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে,
নন্দিত করো, নন্দিত করো,
নন্দিত করো হে।
অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তরতর হে।
কত অজানারে জানাইলে তুমি

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
পুরনো আবাস ছেড়ে যাই যবে
মনে ভেবে মরি কী জানি কী হবে,
নূতনের মাঝে তুমি পুরাতন
সে কথা যে ভুলে যাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
জীবনে মরণে নিখিল ভুবনে
যখনি যেখানে লবে,
চির জনমের পরিচিত ওহে,
তুমিই চিনাবে সবে।
তোমারে জানিলে নাহি কেহ পর,
নাহি কোন মানা, নাহি কোন ডর,
সবারে মিলায়ে তুমি জাগিতেছ-
দেখা যেন সদা পাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।

বাঁশি

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কিনু গোয়ালার গলি।
দোতলা বাড়ির
লোহার-গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর
পথের ধারেই।
লোনাধরা দেয়ালেতে মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি,
মাঝে মাঝে স্যাঁতাপড়া দাগ।
মার্কিন থানের মার্কা একখানা ছবি
সিদ্ধিদাতা গণেশের
দরজার ‘পরে আঁটা।
আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটি জীব
এক ভাড়াতেই,
সেটা টিকটিকি।
তফাত আমার সঙ্গে এই শুধু,
নেই তার অন্নের অভাব॥
বেতন পঁচিশ টাকা,
সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি।
খেতে পাই দত্তদের বাড়ি
ছেলেকে পড়িয়ে।
শেয়ালদা ইস্টিশনে যাই,
সন্ধ্যেটা কাটিয়ে আসি,
আলো জ্বালাবার দায় বাঁচে।
এঞ্জিনের ধস্ ধস্,
বাঁশির আওয়াজ,
যাত্রীর ব্যস্ততা,
কুলি-হাঁকাহাঁকি।
সাড়ে-দশ বেজে যায়,
তার পরে ঘরে এসে নিরালা নিঃঝুম অন্ধকার॥
ধলেশ্বরী-নদীতীরে পিসিদের গ্রাম—
তাঁর দেওরের মেয়ে,
অভাগার সাথে তার বিবাহের ছিল ঠিকঠাক।
লগ্ন শুভ, নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেল—
সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে।
মেয়েটা তো রক্ষে পেলে,
আমি তথৈবচ।
ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া—
পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর॥
বর্ষা ঘনঘোর।
ট্রামের খরচা বাড়ে,
মাঝে মাঝে মাইনেও কাটা যায়।
গলিটার কোণে কোণে
জমে ওঠে, পচে ওঠে
আমের খোসা ও আঁঠি, কাঁঠালের ভূতি,
মাছের কান্কা,
মরা বেড়ালের ছানা—
ছাইপাঁশ আরো কত কী যে।
ছাতার অবস্থাখানা জরিমানা-দেওয়া
মাইনের মতো,
বহু ছিদ্র তার।
আপিসের সাজ
গোপীকান্ত গোঁসাইয়ের মনটা যেমন,
সর্বদাই রসসিক্ত থাকে।
বাদলের কালো ছায়া
স্যাঁত্সেঁতে ঘরটাতে ঢুকে
কলে পড়া জন্তুর মতন
মূর্ছায় অসাড়!
দিনরাত, মনে হয়, কোন্ আধমরা
জগতের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছি।
গলির মোড়েই থাকে কান্তবাবু—
যত্নে-পাট-করা লম্বা চুল,
বড়ো বড়ো চোখ,
শৌখিন মেজাজ।
কর্নেট বাজানো তার শখ।
মাঝে মাঝে সুর জেগে ওঠে
এ গলির বীভত্স বাতাসে—
কখনো গভীর রাতে,
ভোরবেলা আলো-অন্ধকারে,
কখনো বৈকালে
ঝিকিমিকি আলো-ছায়ায়।
হঠাত্ সন্ধ্যায়
সিন্ধু-বারোয়াঁয় লাগে তান,
সমস্ত আকাশে বাজে
অনাদি কালের বিরহবেদনা।
তখনি মুহূর্তে ধরা পড়ে
এ গলিটা ঘোর মিছে
দুর্বিষহ মাতালের প্রলাপের মতো।
হঠাত্ খবর পাই মনে,
আকবর বাদশার সঙ্গে
হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই।
বাঁশির করুণ ডাক বেয়ে
ছেঁড়া ছাতা রাজছত্র মিলে চলে গেছে
এক বৈকুণ্ঠের দিকে॥
এ গান যেখানে সত্য
অনন্ত গোধুলিলগ্নে
সেইখানে
বহি চলে ধলেশ্বরী,
তীরে তমালের ঘন ছায়া—
আঙিনাতে
যে আছে অপেক্ষা ক’রে, তার
পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।

বোঝাপড়া

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক—
সবার তরে নহে সবাই।
তোমায় কতক ফাঁকি দেবে
তুমিও কতক দেবে ফাঁকি,
তোমার ভোগে কতক পড়বে
পরের ভোগে থাকবে বাকি,
মান্ধাতারই আমল থেকে
চলে আসছে এমনি রকম—
তোমারি কি এমন ভাগ্য
বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি
এলে সুখের বন্দরেতে,
জলের তলে পাহাড় ছিল
লাগল বুকের অন্দরেতে,
মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো
উঠল কেঁপে আর্তরবে—
তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গ
ঝগড়া করে মরতে হবে?
ভেসে থাকতে পার যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,
না পার তো বিনা বাক্যে
টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো।
এটা কিছু অপূর্ব নয়,
ঘটনা সামান্য খুবই—
শঙ্কা যেথায় করে না কেউ
সেইখানে হয় জাহাজ-ডুবি।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
তোমার মাপে হয় নি সবাই
তুমিও হও নি সবার মাপে,
তুমি মর কারো ঠেলায়
কেউ বা মরে তোমার চাপে—
তবু ভেবে দেখতে গেলে
এমনি কিসের টানাটানি?
তেমন করে হাত বাড়ালে
সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।
আকাশ তবু সুনীল থাকে,
মধুর ঠেকে ভোরের আলো,
মরণ এলে হঠাৎ দেখি
মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।
যাহার লাগি চক্ষু বুজে
বহিয়ে দিলাম অশ্রুসাগর
তাহারে বাদ দিয়েও দেখি
বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
নিজের ছায়া মস্ত করে
অস্তাচলে বসে বসে
আঁধার করে তোল যদি
জীবনখানা নিজের দোষে,
বিধির সঙ্গ বিবাদ করে
নিজের পায়েই কুড়ুল মার,
দোহাই তবে এ কার্যটা
যত শীঘ্র পার সারো।
খুব খানিকটে কেঁদে কেটে
অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া
মনের সঙ্গ এক রকমে
করে নে ভাই, বোঝাপড়া।
তাহার পরে আঁধার ঘরে
প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো—
ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে
কতটুকুন তফাত হল।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।

মানষী

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী–
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে। বসি কবিগণ
সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন।
সঁপিয়া তোমার ‘পরে নূতন মহিমা
অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা।
কত বর্ণ কত গন্ধ ভূষণ কত-না,
সিন্ধু হতে মুক্তা আসে খনি হতে সোনা,
বসন্তের বন হতে আসে পুষ্পভার,
চরণ রাঙাতে কীট দেয় প্রাণ তার।
লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,
তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন।
পড়েছে তোমার ‘পরে প্রদীপ্ত বাসনা–
অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।
প্রেমের হাতে ঘরা দেব
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে;
অনেক দেরি হয়ে গেল,
দোষী অনেক দোষে।
বিধিবিধান-বাঁধনডোরে
ধরতে আসে, যাই সে সরে,
তার লাগি যা শাস্তি নেবার
নেব মনের তোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।
লোকে আমায় নিন্দা করে,
নিন্দা সে নয় মিছে,
সকল নিন্দা মাথায় ধরে
রব সবার নীচে।
শেষ হয়ে যে গেল বেলা,
ভাঙল বেচা-কেনার মেলা,
ডাকতে যারা এসেছিল
ফিরল তারা রোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।

উপসংহার

আশা করছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার চমৎকার লেগেছে। আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে সেই সম্মন্ধে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। সেরা সকল বাছাই করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের ছড়া আর্টিকেলটিতে শেয়ার করার চেস্টা করেছি।

নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের সাইটে এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।