জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম 2024। দেখুন এখনি

বাংলাদেশে আলাদা ভাবে নাগরিক সনদের চল থাকলেও জন্ম সনদই কিন্তু প্রাথমিক ভাবে আপনার নাগরিকত্বকে প্রমাণ করে। অর্থাৎ আপনি যে বাংলাদেশে জন্মেছেন ও বাংলাদেশের নাগরিক, এর প্রথম প্রমাণটাই হলো জন্ম সনদ। একটি দেশের নাগরিক সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নিজেকে সেই দেশের নাগরিক প্রমাণ করতে হয়। আর জাতীয় পরিচয় পত্র হাতে পাওয়ার আগ অবধি সেটি প্রমাণে জন্ম নিবন্ধন সনদই আপনার ভরসা। তাই জন্ম সনদ হওয়া উচিত নির্ভুল। কারণ ভুলকে ভুল হিসেবেই রেখে দিলে, জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই ভুল তথ্য বয়েই বেড়াতে হবে। সেজন্যই আজকে লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার উপায়।

যেভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন

ধাপ-১ঃ

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রথমেই চলে যেতে হবে https://bdris.gov.bd/br/correction এই লিংকে। এই লিংকটি জন্ম নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটের একটি অংশ। ওই ওয়েবসাইটটিতেই জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল কাজ করা হয়। আর উপরের লিংকটিতে শুধু সংশোধনের কাজ করা হয়।  যেহেতু জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়াটিই অনলাইন তাই এর কোনো বিকল্প নেই। কম্পিউটার হলে ভাল হয়, নাহলে মোবাইল ফোন দিয়েও ঢুকতে পারবেন লিংকটিতে।

ধাপ-২:

লিংকে প্রবেশ করার পর উপরের চিত্রের ন্যায় একটি পেজ ভেসে উঠবে। এতে তথ্য পূরণের জন্য দুটি স্থান থাকবে। প্রথমটিতে জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর প্রবেশ করাতে হবে। নম্বরটি অবশ্যই আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে থাকবে। সাধারণত এটি ব্যক্তিগত পরিচিতি নং যাকে ইংরেজিতে বলে “Personal Identification Number হিসেবে” থাকে।

দ্বিতীয় ঘরটিতে আপনার জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে অবশ্যই তারিখটি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে যেই তারিখ দেওয়া আছে তার সাথে মেলে। নাহলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তারিখ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি টাইপ করে দিতে পারেন। এছাড়া ঘরটিতে ক্লিক করলেই একটি ক্যালেন্ডার ভেসে উঠবে যেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সাল, মাস ও তারিখ নির্ণয় করে দিতে পারবেন। এ সকল তথ্য সঠিক ভাবে দিয়ে হালকা নিল রঙের ‘অনুসন্ধান’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

ধাপ-৩ঃ

জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করার পর জন্ম নিবন্ধনকারীর কিছু তথ্য ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। এই তথ্যগুলো যাচাই করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন এটি আপনার কাঙ্খিত জন্ম নিবন্ধনটি কি না। সব কিছু ঠিক থাকলে পাশে থাকা ‘নির্বাচন করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

ধাপ-৪ঃ

ক্লিক করার পর নিচের চিত্রের ন্যায় ‘আপনি কি নিশ্চিত’ নামক একটি বার্তা ফুটে উঠবে। বার্তাটির নিচে নীল রঙের ‘কনফার্ম’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ-৫ঃ

নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়। কারণ এই নিবন্ধন কার্যালয় থেকেই আপনার জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল কাজ পরবর্তীতে সম্পন্ন হবে। ‘কনফার্ম’ বাটনে ক্লিক করার পর এই পেজটি আসবে।

এই পেজে ধাপে ধাপে নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা নির্ধারণ করতে হবে। যদি আপনি দেশের ভেতরে কাজ করাতে চান তাহলে দেশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ’ কেই নির্ধারণ করুন। আবার বিদেশ থেকে করাতে চাইলে ঐ দেশের নাম উল্লেখ করুন। উল্লেখ্য যে বিদেশ থেকে করাতে চাইলে আপনাকে ঐ দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

দেশের কার্যালয় ব্যবহার করতে চাইলে দেশের পরে পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা, সিটি কর্পোরেশন (City Corporation) / ক্যান্টনমেন্ট / উপজেলা এবং ওয়ার্ড বা  অঞ্চল নির্ধারণ করতে হবে। অফিস নির্ধারণের সুযোগ আপনি পাবেন না। উপরের তথ্যগুলো দিলে আপনার অফিস এমনিতেই নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এবার ‘পরবর্তী’ বোতামে ক্লিক অথবা ট্যাপ করুন।

ধাপ-৬ঃ

পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর যেই পেজটি আসবে সেখানেই আপনার আসল কাজ। এর আগের পেজের কাজগুলো মূলত প্রস্তুতি পর্ব। এই পেজটিতেই জন্ম নিবন্ধন সনদের যে সকল সংশোধন সম্ভব তা হয়ে থাকে।

একটি জন্ম নিবন্ধন সনদে অনেক ধরনেরই তথ্য থাকে। সংশোধন করতে চাইলে একটি একটি করে সংশোধন করা যায়। আপনি কোন তথ্যটি সংশোধন করবেন তা নির্ধারণ করতে উপরে বাম দিকে থাকা ‘বিষয়’ নামক ড্রপ-ডাউন মেনুতে ক্লিক করুন। মেনুতে ক্লিক করলেই অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন নামের বানান, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার কততম সন্তান, লিঙ্গ, পিতার নাম, মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি।

যেই বিষয়টি আপনি সংশোধন করতে চান, ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে তা ঠিক করুন। এরপর ‘বিষয়’ ড্রপ-ডাউন মেনুর ঠিক ডান পাশে অবস্থিত ‘চাহিত সংশোধনের তথ্য’ লেখার পাশে একটি ঘর দেখতে পাবেন। এখানে আপনার সঠিক তথ্যটি দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন এখানেও যেন কোনো ভুল না হয়।

সঠিক তথ্যটি দেওয়ার পরে তার বাম পাশে ‘সংশোধনের কারণ’ ঘরটি চালু হয়ে যাবে। সেখানেও প্রথম ঘরের মতো একটি ড্রপ-ডাউন মেনু দেখতে পাবেন। মেনুতে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে আবার একটি কারণও থাকতে পারে। ‘ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল’ কারণটি দেওয়াই সবচেয়ে সহজ উপায়।

ধাপ-৭:

অনেক সময়েই আমাদের সনদে একের অধিক ভুল থাকে। যেহেতু একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ ৮ বারের বেশি পরিবর্তন করা যায় না, সনদে একের বেশি ভুল থাকলে অবশ্যই উচিত এক আবেদনেই সকল ভুল সংশোধন করে নেওয়া। প্রথম ভুল নির্ধারণ করে সঠিক তথ্য ও কারণ দেওয়ার পরেই নিচে আরেকটি সবুজ রঙের বাটন ফুটে উঠবে। ‘আরো তথ্য সংযোজন করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করলেই আপনি আরো তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একবারে একটি তথ্যই সংশোধনের জন্য দিতে পারবেন। আরো তথ্য ভুল থাকলে আবারো বাটনটি চেপে অন্য ভুল সংশোধন করতে হবে।

ধাপ-৮ঃ

জন্ম সনদে যেমন ভুল থাকতে পারে, তেমন আপনারও ভুল হতেই পারে। অনেক সময় অনেকে দেখার ভুলে মনে করেন সনদের কোনো তথ্য ভুল আছে। কিন্তু আবেদন করতে গিয়ে দেখা যায় আসলে তথ্যটি ঠিকই আছে। আবার অনেকে দোকানদারের সাহায্য নিয়ে সংশোধনের আবেদন করে থাকেন। এক্ষেত্রেও দোকানের অপারেটর ভুল করতেই পারে। আর ভুলক্রমে কোনো তথ্য সংশোধনের জন্য দিয়ে ফেললে বিষয়, চাহিত সংশোধিত তথ্য ও সংশোধনের কারণ এর পাশেই ‘Delete’ নামের একটি বাটন আছে। কোনো কারণে সংশোধিত তথ্যটি বাতিল করতে চাইলে ‘Delete’ বাটনে ক্লিক করলেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

ধাপ-৯ঃ

এবার আরো কিছু তথ্য যুক্ত করার পালা। আবেদনের এই অংশে আপনাকে আরো কিছু তথ্য দিতে হবে যা আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা হিসেবে গণ্য হবে। তথ্যগুলো হলোঃ

  • দেশ
  • বিভাগ
  • ডাকঘর (বাংলা ও ইংরেজিতে)
  • গ্রাম / পাড়া / মহল্লা (বাংলা ও ইংরেজিতে)
  • বাসা ও সড়ক, নাম ও নম্বর (বাংলা ও ইংরেজিতে)

উল্লেখ্য যে দেশ ও বিভাগের নাম সাইটের ড্রপ-ডাউন মেনু থেকেই নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাই এতে বানান ভুলের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাকি তথ্যগুলো আপনাকে টাইপ করেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানী হতে হবে এবং আপনার জন্ম সনদে ঠিক যেই সকল তথ্য দেওয়া রয়েছে বানান ঠিক রেখে হুবুহু ওই তথ্যই সাইটে দিতে হবে।

ধাপ-১০ঃ

জন্মস্থানের ঠিকানা সঠিক ভাবে দেওয়ার পর জন্ম সনদের সাথে মিল রেখে বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার ঘরগুলিও পূরণ করতে হবে।

ধাপ-১১ঃ

উপরের সকল তথ্য দেওয়ার পর এবার আবেদনকারীর তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এই ধাপটিতে মোট ৪ ধরনের তথ্য দিতে হবে।

  • জন্ম সনদের অধিকারির সাথে আবেদনকারীর সম্পর্ক
  • আবেদনকারীর নাম
  • আবেদনকারীর ঠিকানা
  • ফোন নম্বর
  • ইমেইল

উল্লেখ্য যে, সংশোধনের আবেদনকারী যদি জন্ম সনদের অধিকারী বা তার মা-বাবা বাদে অন্য কেউ হয়ে থাকেন তাহলে আরো কিছু তথ্যের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই তার নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও জন্ম সনদের নম্বর প্রদান করতে হবে।

ধাপ-১২ঃ

এই ধাপটিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করতে হবে। সেটি হলো আপনার আবেদনের পক্ষে প্রমাণ পেশ করা। জন্ম নিবন্ধন চাইলেই আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। আগের জন্ম সনদে যে আসলেই ভুল ছিল এবং আপনি যেই তথ্য দিচ্ছেন সেটিই সঠিক এমনটি প্রমাণ করতে কিছু কাগজপত্রের দরকার। কোন ধরনের সংশোধনের জন্য কোন ধরনের কাগজপত্র দরকার তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ

সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ 
পিতা-মাতার নাম বা অন্য কোনো তথ্য
  • পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • পিতা-মাতার মৃত্যু সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
নিজের নামের বানান অথবা জন্ম তারিখ
  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র
  • তার এসএসসি সার্টিফিকেট
  • তার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • তার ইপিআই কার্ড
  • তিনি যেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে জন্ম নিয়েছেন তার ছাড়পত্র
ঠিকানা পরিবর্তন (স্থায়ী)
  • এলাকার কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান এর প্রত্যয়নপত্র
  • স্থায়ী ঠিকানার হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমাণ
ঠিকানা পরিবর্তন (বর্তমান)
  • বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিলের কপি

তাই জন্ম সনদ সংশোধন করতে চাইলে প্রথমেই প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র গুলো যোগাড় করুন। অতঃপর প্রতিটি কাগজের স্ক্যান কপি তৈরি করুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো স্ক্যানড ফাইলের আকারই যেন ৯৭৬ কিলোবাইটের বেশি না হয়। কারণ জন্ম সনদ সংশোধনের সার্ভার সর্বোচ্চ ৯৭৬ কিলোবাইটের ফাইল আপলোড করতে দেয়। সাইজ বা আকার এর চেয়ে বেশি হলে যেই দোকান থেকে করছেন সেখানে বলে কমিয়ে নিতে পারেন। আর নিজে স্ক্যান করলে ক্রপ করে বা অন্য কোনো উপায়ে আকার কমাতে পারেন।

এবার প্রমাণ দাখিলের জন্য নিচের ছবির ন্যায় ‘সংযোজন’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

সংযোজন বাটনে ক্লিক করলে আপনি আপনার ডিভাইস থেকে প্রয়োজনীয় ছবিটা (কাগজের স্ক্যানড কপি) আপলোড দিতে পারবেন। আপলোড দেওয়ার পরে আরেকটি ড্রপ-ডাউন মেনু দেখতে পারবেন যেখান থেকে আপনার আপলোড দেওয়া ছবিটা আসলে কি তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।

প্রমাণের ধরন নির্ধারণ করার পর আপনি ছবির ধরন ও ঠিক করে দিতে পারবেন। ‘Sub Type’ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে ছবিটি কোন ধরনের ফাইল, অর্থাৎ JPJ, JPEJ, PNG ইত্যাদি ফাইলের ধরনও ঠিক করে দিতে পারবেন।

প্রমাণের ধরন ও ফাইলের ধরন ঠিক করে দেওয়ার পরে ডান পাশে নীল রঙের ‘Start’ বাটনে ক্লিক করলেই ফাইলটি আপলোড হয়ে যাবে। আবার আপনি যদি ভুল ফাইল আপলোড করে থাকেন তাহলে হলুদ রঙের ‘Cancel’ বাটনে ক্লিক করলে এই ফাইলটি বাতিল হয়ে যাবে। তখন আবার নতুন করে ফাইল আপলোড করতে পারবেন। এছাড়াও একই সাথে একাধিক প্রমাণ আপলোড করতে চাইলে আবারো ‘সংযোজন’ বাটনে ক্লিক করলেই নতুন ফাইল আপলোড করতে পারবেন।

ধাপ-১৩ঃ

এই ধাপে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ফি আপনি কিভাবে দিতে চান তাও নির্ধারণ করে নিতে হবে। এর মূলত দুটি উপায় আছে। প্রথমটি হলো ‘ফি আদায়’। এই উপায়ে আপনি জন্ম সংশোধন সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে তোলার সময় ফি পরিশোধ করবেন। এছাড়া আগে থেকেই ফি পরিশোধ করে রাখতে চাইলে ‘চালান এর মাধ্যমে’ অপশনটিতে ক্লিক করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাংক এর সেবা চালান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে। এবার সকল তথ্য ঠিক থাকা সাপেক্ষে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে দিন।

ধাপ-১৪ঃ

‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার আবেদনপত্রটি দাখিল হয়ে যাবে। পরবর্তী পেজে আপনার আবেদন পত্রের নম্বর ও কবে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় যাবেন সেই তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে। এবার নিচের সবুজ ‘আবেদনপত্র প্রিন্ট’ বাটনে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে ফেলুন। প্রিন্টার না থাকলেও এই বাটনে চাপ দিন। আবেদন পত্রটি পিডিএফ (PDF) আকারে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। পরে তা প্রিন্ট করতে পারবেন।

ধাপ-১৫ঃ

এবার সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সনদটি হাতে পাওয়ার পালা। উল্লেখিত তারিখ বা তার এক-দুই দিন আগে সংশ্লিষ্ট অফিসে সকল কাগজপত্র ও নিয়ে যান। সাথে অবশ্যই ফটোকপি রাখবেন কারণ মূল কাগজ ফেরত দিলেও ফটোকপি তারা জমা নিতে পারে। কাগজপত্র জমা দিয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের কয়েকটি নির্দেশনা মানলেই সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়ে যাবেন।

জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের খরচ

উপরের ধাপ-১৩ তে আপনারা জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের ফি পরিশোধের কথা জেনেছেন। নিচে জন্ম নিবন্ধনের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা খরচ ছক আকারে দেখানো হলোঃ

বিষয় ফিসের হার (দেশে) ফিসের হার (বিদেশে) 
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে যেকোনো ব্যাক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধনবিনা খরচেবিনা খরচে
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর থেকে ৫ বছর সময় পর্যন্ত২৫ টাকা১ মার্কিন ডলার
জন্ম বা মৃত্যুর ৫ বছর পর কোনো ব্যাক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন৫০ টাকা১ মার্কিন ডলার
জন্ম তারিখ সংশোধন১০০ টাকা২ মার্কিন ডলার
জন্ম তারিখ ব্যতীত নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি অন্যান্য তথ্য সংশোধন৫০ টাকা১ মার্কিন ডলার
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূলস সনদ ও তথ্য সংশোধনের পর দুই ভাষায় সনদের কপি সরবরাহবিনা খরচেবিনা খরচে
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহ৫০ টাকা১ মার্কিন ডলার

শেষকথা

পরিশেষে এইটুকুই বলা যায়, ডিজিটাল দুনিয়ায় পা দেওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ তার জন্ম সনদগুলোকেও ডিজিটাল করছে। আর এই প্রক্রিয়ায় অপারেটরের ভুলে অনেকেরই অনেক তথ্য ভুল হচ্ছে। কোনো ভুলকেই অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ ভুল লক্ষ্য করার সাথে সাথেই সংশোধন না করলে প্রয়োজনের সময় আর তা সংশোধনের সময় থাকে না। তাই সময় মতো জন্ম নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধন করুন, ঝামেলামুক্ত থাকুন।

অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১) জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের সময় কার মোবাইল নম্বর দেবো?

উত্তরঃ অবশ্যই আপনার নিজের বা আপনার বাবা-মার মোবাইল নম্বর দেবেন। অনেকেই কম্পিউটার অপারেটর বা কোনো সরকারি কর্মচারীর নম্বর দিতে চান। এটি একদমই করা উচিত নয়।

২) অন্য কেউ কি আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের আবেদন করতে পারবে?

উত্তরঃ পারবে। তবে অন্য কেউ আবেদন করলে অবশ্যই তাকে আপনার সাথে সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে এবং তার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম সনদ নম্বর দিতে হবে।

৩) একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে সর্বোচ্চ কয়জন আবেদন করতে পারে?

উত্তরঃ একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে একই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজন আবেদন করতে পারে।

৪) সর্বোচ্চ কতবার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করা যাবে?

উত্তরঃ সর্বোচ্চ ৪ বার সংশোধন করা যাবে।

৫) জন্ম সনদের নামের বানান বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি এসএসসি সার্টিফিকেটের?

উত্তরঃ অবশ্যই জন্ম সনদের নামের বানান।

৬) জন্ম সনদে নম্বর কম থাকলে কি করণীয়?

উত্তরঃ অনেক সময় জন্ম সনদের নম্বর ১৭ সংখ্যার বদলে ১৬ সংখ্যার হয়। এক্ষেত্রে আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষয়দ বা সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হোন।

৭) আমার জন্ম সনদে নামের বানান ভুল, আমি কি কোনোভাবে ঠিক নামের বানান দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র করাতে পারবো?

উত্তরঃ না। আপনার জন্ম সনদের বানান দিয়েই নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড করাতে হবে।