ইন্টারনেট কি? কার্যকারিতা, সুবিধা এবং নেতিবাচক প্রভাব
আপনি যদি জানতে চান, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার কোনটি, তবে অনেকেই বলবেন—কম্পিউটার। কিন্তু আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমন একটি বিষয় রয়েছে যা ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলতে পারে না: ইন্টারনেট। তবে, আমরা কি জানি সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেট কী? এটি কিভাবে কাজ করে? এর সুবিধা ও অসুবিধা কী?
আজকের আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে ইন্টারনেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলব। আমরা আলোচনা করব ইন্টারনেটের মৌলিক সংজ্ঞা, এর কাজ করার পদ্ধতি, সুবিধা ও অসুবিধা, এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন রহস্য ও অজানা তথ্য।
সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালভাবে জানতে এবং বুঝতে, অনুগ্রহ করে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আর্টিকেলের বিষয়বস্তু –
- ইন্টারনেট কি?
- ইন্টারনেট এবং ওয়েবের মধ্যে পার্থক্য কী?
- ইন্টারনেট কত সালে চালু হয়? এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- ইন্টারনেট কিভাবে সংযোগ দেয়?
- ইন্টারনেটের প্রকারভেদ
- ইন্টারনেট কী কাজে লাগে?
- ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা
- বাংলাদেশে ইন্টারনেটের সূচনা
- আইপি এড্রেস কী?
- DNS এবং Subnet Mask কী?
- ইন্টারনেট প্রটোকল
ইন্টারনেট কী?
ইন্টারনেটের অর্থ হলো “অন্তর্জাল” বা “ভিতরের জাল”। শব্দটি “ইন্টারন্যাশনাল” (International) এবং “নেটওয়ার্ক” (Network) থেকে এসেছে। সাধারণভাবে, ইন্টারনেট হল বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সমষ্টি, যা রাউটার ও অন্যান্য প্রোটোকল দিয়ে একসাথে যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটার ও ডিভাইসকে একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়।
ইন্টারনেট এবং ওয়েবের পার্থক্য কী?
অনেকে ইন্টারনেট এবং ওয়েবকে একে অপরের প্রতিশব্দ মনে করেন, কিন্তু এগুলি ভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে। ইন্টারনেট হলো একটি বিশাল নেটওয়ার্ক যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে, ওয়েব (World Wide Web) ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদত্ত একটি সেবা যা হাইপারলিংক ও ইউআরএল দ্বারা সংযুক্ত বিভিন্ন কনটেন্টের সমষ্টি।
ইন্টারনেট কত সালে চালু হয়? সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৬৯ সালে আর্পানেট (ARPANET) নামে প্রথম নেটওয়ার্ক চালু হয়। এটি ছিল একটি প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক। ১৯৭০ সালে নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (NIC) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে বাণিজ্যিক আইএসপি ইন্টারনেট সেবা প্রদান শুরু করে। ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ হয় এবং তারপর বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইটের আবির্ভাব ঘটে, যেমন Amazon, Google, Facebook ইত্যাদি।
ইন্টারনেট কিভাবে সংযোগ দেয়?
ইন্টারনেট মূলত নেটওয়ার্কের সমষ্টি। রাউটার দিয়ে নেটওয়ার্কগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয় এবং প্রতিটি নেটওয়ার্ককে আইপি এড্রেস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রতিটি ডিভাইসে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) প্রয়োজন হয় এবং নেটওয়ার্ক ক্যাবল দ্বারা সংযুক্ত হয়।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদ
ইন্টারনেট সংযোগের প্রকারভেদ সাধারণত চারটি ভাগে বিভক্ত:
- ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন (DSL)
- ক্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন
- ফাইবার ইন্টারনেট কানেকশন
- স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কানেকশন
ইন্টারনেট কী কাজে লাগে?
ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তথ্য অনুসন্ধান, যোগাযোগ, অফিসের কাজ, ব্যবসায়িক লেনদেন, শিক্ষা, বিনোদন, সামাজিক যোগাযোগ এবং আরও অনেক কিছু করতে পারি। এটি আমাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা
ইন্টারনেটের সুবিধা যেমন বিশ্বব্যাপী সংযোগ, তথ্য সহজলভ্যতা, ই-বিজনেসের সুবিধা ইত্যাদি, তেমনি অসুবিধার মধ্যে পর্নোগ্রাফি, তথ্য চুরি, শিশুদের অনলাইনে আসক্তি ইত্যাদি রয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের সূচনা
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ১৯৯৩ সালে চালু হয় এবং ১৯৯৬ সালে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে।
আইপি এড্রেস কী?
আইপি এড্রেস হলো একটি অনন্য সনাক্তকারী নম্বর যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসে দেওয়া হয়। এটি দুটি প্রধান ভার্সনে বিভক্ত: IPv4 এবং IPv6।
DNS, Subnet Mask কী?
DNS: ডিএনএস (Domain Name System) হলো একটি শ্রেণিবিন্যাসিক ও বিকেন্দ্রীভূত নামকরণ সিস্টেম যা ইন্টারনেটে অথবা একটি ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কে কম্পিউটার, পরিষেবা বা অন্যান্য সংস্থার জন্য নাম নির্ধারণ করে। সহজভাবে বললে, DNS হলো ইন্টারনেটের ফোনবুক যা হোস্টনেমকে তাদের আইপি ঠিকানায় রূপান্তর করে, যেমন “www.example.com” কে “192.0.2.1”-এ পরিণত করে।
Subnet Mask: সাবনেট মাস্ক হল একটি 32-বিটের সংখ্যা যা IP ঠিকানার কোন অংশটি নেটওয়ার্ক আইডি এবং কোন অংশটি হোস্ট আইডি তা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি IP ঠিকানার সাথে মিলিয়ে নেটওয়ার্ক টপোলজি চিহ্নিত করে এবং নির্ধারণ করে যে, একটি নির্দিষ্ট IP ঠিকানা একটি নির্দিষ্ট সাবনেটের অংশ কিনা। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ সাবনেট মাস্ক হলো 255.255.255.0 যা আইপি ঠিকানার প্রথম তিনটি অক্টেটকে নেটওয়ার্ক অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং শেষের অক্টেটকে হোস্ট অংশ হিসেবে গণনা করে।
ইন্টারনেট প্রটোকল:
ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) হলো একটি যোগাযোগ প্রোটোকল যা ডেটা প্যাকেটগুলিকে গন্তব্যে প্রেরণ এবং গ্রহণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা প্যাকেটগুলির গন্তব্য নির্ধারণ করে এবং তাদের সঠিকভাবে স্থানান্তরিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।