ফ্রিল্যান্সিং কি ? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং – এ ক্যারিয়ার গড়বেন? – (২০২৩)

ফ্রিল্যান্সিং কি
ফ্রিল্যান্সিং কি

আচ্ছা, ফ্রিল্যান্সিং করে কি আসলেই মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা যায়? ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করতে যেয়ে আমরা প্রায়ই এমন সব বিজ্ঞাপন দেখে থাকি- “দশ দিনে ফ্রিল্যান্সিং শিখে হয়ে যান লাখপতি!” এসব বিজ্ঞাপন দেখে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এগুলো কি আদৌ সম্ভব?

ফ্রিল্যান্সিং কি (What Is Freelancing in Bangla) : এমনিতে, ইন্টারনেট থেকে অনলাইন ইনকাম করার অনেক মাধ্যম বা উপায় আমি আপনাদের আগেই বলেছি। আজ আরেকটি নতুন অনলাইন টাকা আয়ের বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের বলবো। আর সেই বিষয়টি হলো, “ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)“. আজকের আর্টিকেলের দ্বারা আমরা ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড বিভিন্ন বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো

ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে শুরু করবেন: ফ্রিল্যান্সিংকে আজ অনেকেই একটি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সকল ফ্রিল্যান্সারদের তাদের পরিচয় ব্যবহারের জন্য একটি আইডি কার্ড এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার আমাদের অনেকেই এই পথে পা ডুবিয়ে হতাশ হয়ে হয়ত ফিরে এসেছে। এর প্রধান কারণ হলো অনভিজ্ঞতা এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করা। যার ফলে অনেকেই অনেক উৎসাহের সাথে  শুরু করেও তা থেকে ফিরে আসতে হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং কি ? (What Is Freelancing In Bangla)

সোজা ভাবে বললে, ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি আলাদা মাধ্যম বা উপায়, যার দ্বারা আপনারা অনলাইন কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। এমনিতে, একটি চাকরি (job) করা ব্যক্তিকে সকাল ১০ থেকে বিকেল ৬ অব্দি অফিসে গিয়ে এক ধরণের কাজ করতেই হবে।

কিন্তু, freelancing এর মাধ্যমে কাজ করা লোকেরা স্বনির্ভর (self-employed) থাকেন। তাই, ফ্রিল্যান্সিং এর মানেই হলো স্বাধীন ভাবে কাজ করা বা মুক্তপেশা। এটাও এক ধরণের ব্যবসা বললে আমি ভুল হবোনা।

এই প্রক্রিয়াতে লোকেরা, অনলাইন বিভিন্ন সূত্রের (sources) মাধ্যমে কাজ খুঁজে নিজের ইচ্ছে হিসেবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে, যারা এভাবে স্বাধীন হয়ে freelancing এর কাজ করেন, তাদের “freelancer” বলা হয়।

আজ, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলির মাধ্যমে, এই ফ্রিল্যান্সাররা (freelancer) নানান ধরণের কাজ, প্রজেক্ট বা সার্ভিস খুঁজে, সেগুলি তারা তাদের ক্লায়েন্টস (clients) দেড় জন্য নির্ধারিত সময়ে পুরো করছেন। এবং, কাজ বা প্রজেক্ট পুরো করার বিনিময়ে তাদের ক্লায়েন্টরা তাদেরকে টাকা দিচ্ছেন।

অবশ্যই, আপনি যেই প্রজেক্ট বা কাজ করবেন বলে ভাবছেন, তার জন্য কত টাকা নিবেন, সেটা আপনার ক্লায়েন্ট (client) এর সাথে আগেই ঠিক করে নিতে পারবেন। এবং, সঠিক ভাবে কাজ শেষ হওয়ার পর, আপনার টাকা আপনাকে দিয়ে দেয়া হয়।

এই মাধ্যমে কাজ করার সুবিধে অনেক। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন যে, আপনি কতটা সময় কাজ করতে চান, কতটুকু কাজ করতে চান এবং এই কাজ আপনি পার্ট টাইম (part-time) করবেন না ফুল টাইম (full-time).

তাছাড়া, ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নেয়া কাজ গুলি করার জন্য আপনার কোনো বিশেষ জায়গার প্রয়োজন হবেনা। কারণ, প্রায় সব ধরণের কাজ করার জন্য আপনার কেবল একটি ল্যাপটপ (laptop) বা কম্পিউটারের (computer) এবং তার সাথে ইন্টারনেট কানেক্শনের প্রয়োজন।

তাই, সবটাই আপনি নিজের ঘরে বোসে বোসেই করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং কে আমরা একটি বিসনেস (business) হিসেবেও নিয়ে কাজ করতে পারি।

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি ?

বর্তমান এর আধুনিক সময়ে মাসের শেষে একটি মোটা অংকের টাকা আয় করার জন্যে কেবল ৯ থেকে ৫ পর্যন্ত করা চাকরি যথেষ্ট না।

তবে, আজকের সময়ে কেবল চাকরি করেই যে অধিক টাকা উপার্জন করা যাবে এটাও কিন্তু নয়।

কেননা, আজ অনলাইনে প্রচুর Digital work platforms এবং online talent marketplaces গুলো রয়েছে যেগুলোর দ্বারা অনলাইনে কাজ পাওয়াটা প্রচুর সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Remote work-এর দ্বারা employers এবং employees দুপক্ষের ক্ষেত্রেই যেকোনো জায়গার থেকে কাজ করার সুবিধা রয়েছে।

আর তাই, বিগত কিছু বছরের মধ্যে ঘরে বসে অনলাইনে স্বাধীন ভাবে কাজ করা freelancer-দের সংখ্যা প্রায় ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ আগের তুলনায় লোকেরা অনেক বেশি পরিমানে অনলাইন কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।

প্রত্যেকের ঘরে আজ রয়েছে একটি laptop বা computer এবং সাথে internet connection.

তাই, ঘরে বসে নিজের খালি সময়ে কাজ করে extra income করার trend এবং কৌশল বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক।

এছাড়া, এখানে আপনার প্রয়োজন হবে কাজের অভিজ্ঞতা এবং কৌশল এর।

তাই, যদি আপনার কাছে একটি বা একাধিক নির্দিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান বা দক্ষতা থেকে থাকে, তাহলে এখানে কাজ পাওয়া অনেক সোজা।

দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে কাজের খোঁজ করার সাথে সাথে যদি ফ্রীল্যানসিং করে থাকেন, তাহলে কিঠিক ফ্রীল্যানসিং এর কাজটাই আপনার ফুলটাইম কাজ হয়ে যেতে পারে।

আজ বিশ্বজুড়ে লোকেরা এই ধরণের অনলাইন কাজ গুলোর প্রচুর লাভ নিচ্ছেন।

নিজের ট্যালেন্ট, কাজের অভিজ্ঞতা এবং কৌশল কে কাজে লাগিয়ে সহজেই কাজ পেয়ে যাচ্ছেন এবং টাকা আয় করছেন।

বর্তমান সময়ে প্রচুর লোকেরা ফ্রিল্যান্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং মানে কি, এই বিষয়ে জানার রুচি দেখিয়েছেন।

আর যিহেতু freelancing-এর দ্বারা company এবং brand গুলো অনেক সহজেই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকা ট্যালেন্ট গুলো খুঁজে পাচ্ছেন, এবং তাদের দিয়ে কম খরচেই চুক্তি হিসেবে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন,

তাই, আমি মনে করি ফ্রিল্যান্সিং এর একটি অনেক উজ্জল ভবিষ্যৎ।

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার কেন গড়বেন?

ফ্রিল্যান্সিং সহজ কাজ নয়। তেমনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের আয় ও কম নয়।

ফ্রিল্যান্সিং লাইফ সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায়, একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সফল হওয়ার পেছনের গল্প শুনলে আপনি তাকে ‘লিজেন্ড’ খেতাব দিবেন। কারণ সফলতার পেছনের গল্প আনন্দের হয়না, অনেক স্ট্রাগল থাকে। রাতের পর রাত কোন কাজ শেখা, ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখা, বই পড়া, কাজগুলো প্র্যাক্টিস করা, ধৈর্য ধরে টাকার আশা  না করে কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য মাসের পর মাস সময় দেয়া, এসব থাকে একজনের সফলতার পেছনে।

একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

আপনি ধরুন বিবিএ পড়ছেন। ফিন্যান্স নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে ২০ বছর। ২০ বছর পড়াশোনা করা আপনি একটা জবে ফ্রেশার হিসেবে এপ্লাই করেন, যার সেলারি ১৫ হাজারের মত। অনেকবার রিজেক্ট হতে হয়, কারণ আরও শত-শত এপ্লাই করছে। শেষমেশ একটা জব পান।

ফিল্যান্সিং মানে কি

১৫ হাজারের জব করার জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করলেন দু-বার না ভেবে। পড়াশোনা শেষ করে একটা লোকাল জবের জন্য প্রতিযোগীতায় নামলেন একই শহরের অন্যদের সাথে, যারা কিনা আপনার লেভেলের পড়াশোনাই করেছে।

এবার ভাবুন ফ্রিল্যান্সিং এর কথা, এমেরিকার একটা কোম্পানি তাদের একটা জব আউটসোর্স করল মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে। ২ সপ্তাহের প্রজেক্ট, ১ হাজার ডলার। এপ্লাই করল কারা? সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ওপেন, (ছোট শহর নয়), বিশ্বের টপ প্রফেশনালরা এপ্লাই করল, আপনিও করলেন। তার মানে? এবার আপনার প্রতিযোগীতার লেভেল কোথায়?

এবার ভাবুন, এই লেভেলে প্রতিযোগিতার জন্য আপনি শুধু ২ মাসের কোর্স করেই দক্ষ হতে পারবেন? অবাস্তব নয়?

হ্যাঁ এটা সত্যি যে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ে মাসে লাখ টাকা আয় করা যায়, সার্ভেতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং আয় মাসে ২ লাখের উপর। কিন্তু তারা ২ মাসে কোর্স করে এত দূর আসেনি। তারা অন্তত এক বছর  সময় নিয়ে টাকা আয়ের কথা না ভেবে শেখার উপর জোর দিয়েছিল!

যেখানে ১৫ হাজার টাকার জবের জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করলেন, মাসে কয়েক লক্ষ আয় করতে, বিশ্বের টপ-লেভেল প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে ১-২ বছর সময় দিয়ে কাজ শিখবেন না?

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার (career) আরম্ভ করবো (step by step)

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার (career) শুরু করার জন্য আপনি নিচে দেয়া স্টেপস গুলি এক এক করে জেনেনিতে পারেন।

১. নিজের লক্ষ্য (Goal) সঠিক ভাবে সেট করুন

সবচে আগেই, আপনার কিছু জিনিস বা লক্ষ্য (goals) সঠিক ভাবে সেট করে নিতে হবে। যেমন, আপনি এই মাধ্যমে কতটুকু কাজ করতে চান ? কতটা সময় দিতে চান ? আপনি কি, নিজের চাকরির সাথে সাথে এই কাজ চালিয়ে যাবেন এবং পার্ট-টাইম ইনকাম করবেন না কি ফুল টাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন।

এগুলি ব্যাপারে, প্রথমেই ঠিক কোরে নিতে হবে। এতে, পরে আপনি আপনার লক্ষ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবেন।

২. কোন বিষয় (niche) নিয়ে কাজ করবেন ?

দ্বিতীয়তে আপনার, নিজের কাজের টপিকসাবজেক্ট বা niche কি হবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আপনি, যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ খুঁজতে ও করতে পারবেন। যেমন, content writingweb designingcoding এর কাজ, Logo designingSEO servicesVideo creating, video editing, content marketing বা আরো অনেক কাজ নিয়ে আপনি শুরু করতে পারবেন।

কিন্তু, আপনি যেই niche বা টপিক নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন ভাবছেন, সেই বিষয় বেঁচে নেয়ার আগেই ৪ জিনিস অবশই দেখবেন।

  • আপনার বেঁচে নেয়া টপিক এমন হতে হবে যার বিষয়ে আপনার পুরো অভিজ্ঞতাদক্ষতা এবং জ্ঞান রয়েছে।
  • যেই কাজ করে এবং যার বিষয়ে নতুন নতুন জিনিস শিখে আপনি ভালো পান সেই কাজ করবেন।
  • আপনি যেই niche বা টপিক টার্গেট করে ফ্রিল্যান্সিং করবেন ভাবছেন, সেই niche এর মার্কেটে কতটা প্রয়োজন এবং চাহিদা আছে সেটা জানা জরুরি।
  • এমন বিষয় বা niche নিয়ে কাজ করতে হবে, যেই বিষয়ে আপনার আবেগ (passion) রয়েছে। এতে, কাজ করে আপনি বিরক্ত (bore) হবেননা এবং, বেশি সময় কাজ করতে পারবেন।

তাহলে, freelancing business এর জন্য কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন, সেটার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই ওপরে বলা ৪ টি পয়েন্ট অবশই মনে রাখবেন।

৩. কোন কোন freelancing platform বা site এ কাজ করবেন ?

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য আপনি বিভিন্ন অনলাইন freelancing সাইট বা মার্কেটপ্লেস গুলিতে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।

এই ধরণের সাইট গুলিতে বিভিন্ন employer বা clients রা বিভিন্ন ধরণের কাজ করানোর জন্য ফ্রিল্যান্সার দেড় খুজেঁন। এবং, ফ্রিল্যান্সার রা নতুন নতুন কাজ খোঁজার জন্য এই সাইট গুলিকে ব্যবহার করেন।

মনে রাখবেন, এই সাইট গুলিতে হাজার হাজার লোকেরা বিভিন্ন ধরণের কাজ করানোর জন্য বিশ্বাসী freelancer দেড় খুজেঁন। এবং, আপনি যদি প্রথমেই নিজের ক্লায়েন্ট (client) এর জন্য সময় মতো ভালো ভাবে কাজ করে দিতে পারেন, তাহলে আপনার ক্যারিয়ারে এ অনেক ভালো প্রভাব ফেলবে।

আমি আগেই বলেছি, এই কাজে পুরোটাই বিশ্বাসের ওপরে নির্ভর। তাই, আপনি যদি সত্যি কথা বলে সঠিক সময়ে নিজের কাজ ভালো করে পুরো করে client কে জমা দেন, তাহলে এতে সহজে টাকা পেয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার প্রতি অন্যদের ভরসাও বেড়ে যাবে।

এতে, আপনার একটি ভালো পরিচয় তৈরি হয়ে যাবে এবং পরের বারের জন্য আপনাকে কাজ দিতে লোকেরা ভাববেননা।

তাহলে, এখন আমরা নিচে দেখে নেই, ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার জন্য আমরা কোন কোন সাইট ব্যবহার করতে পারি।

১০টি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট:

আমরা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জানলেও হয়ত সেরকম ভাবে সঠিক জানিনা যে কোন ওয়েবসাইট গুলো মূলত ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করে । বা জানলেও হয়ত দুই একটি ওয়েবসাইট এর বেশি নয়। তাই আজ আমরা আপনাদের কাছে আপনাদের জানা অজানা এরকম দশটি ওয়েবসাইট তুলে ধরব:-

1. Upwork

2013 সালের দিকে মূলত Elance এবং oDesk নামের যে দুটি ওয়েবসাইট চালু হয়েছিল তা থেকেই ফ্রিল্যান্সারদের এক অন্য রকম ক্ষেত্র তৈরি হয়। আর ঠিক তখনি এই দুটি ওয়েবসাইটের হাত ধরেই Upwork এর যাত্রা শুরু হয়।

Upwork যে শুধুমাত্র একটি জনপ্রিয় ওয়েব সাইট তা নয়, বরং জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এটি একটি অন্যতম বড় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট। বর্তমানে প্রায় 1.5 মিলিয়ন ক্লায়েন্ট এই ওয়েবসাইটের সাথে জড়িত আছে। এবং শুধু তাই নয় , বর্তমানে এর সংখ্যা আরো বেড়ে চলেছে

Upwork এর মাধ্যমে আপনি আপনার সুপ্ত প্রতিভা গুলোকে অনেক বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরতে পারবেন। কেননা এখানে writing, coding, graphic design,  web development , graphics design সহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন। Upwork একটি বিশ্ব ব্যাপী বিস্তৃত ওয়েবসাইট এবং এখানে ক্লায়েন্ট রা ফ্রিল্যান্সার খোজা সহ এমনকি ফ্রিল্যান্সাররাও তাদের কাজ খুজে নিতে পারে। বর্তমানে প্রায় 180 টিরও অধিক দেশে এই Upwrok এর বিস্তৃতি রয়েছে।

2. Freelancer:

Freelancer একটি অন্যতম ফ্রিল্যান্সিং সাইট।এটি যে রকম জনপ্রিয় ঠিক তেমনি পুরোনো। Freelancer ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু হয়  2009 সাল থেকে। এবং আস্তে আস্তে এটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যায়। বর্তমানে প্রায় 15 মিলিয়ন এর থেকেও বেশি ইউজার এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করছে।

Upwork এর মতো Freelancer ও আপনার প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করবে। এখানেও   আপনি web design, coding, graphics সহ আপনার পছন্দ অনুযায়ী কাজ খুজে নিতে পারেন। এবং ক্লায়ন্ট রাও তাদের কাজ অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার হায়ার করতে পারে। Freelancer সাইটে ফ্রিল্যান্সারদের 10% ফি চার্জ করার ব্যবস্থা করা হয়।

3. Guru:

Guru আর একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট। এখানে প্রায় 1.5 মিলিয়ন এর অধিক ইউজার রয়েছে। এই সাইটে প্রায় 100 মিলিয়ন এরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবং প্রায় 200 মিলিয়ন এর বেশি মানি পেইড করা হয়েছে। এই সাইটটি বিশ্বব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে।

এই ওয়েবসাইট এ আপনি আপনি ঠিক একই রকম ভাবে app development,  IT design, web design সহ প্রায় সব ধরনের কাজ খুজে নিতে পারবেন। এখান একই ভাবে ক্লায়েন্ট রা কাজ পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সার রা শর্ত অনুযায়ী তাদের কাজ খুজে নেয়। এবং এই সাইটটি SafePay নাম এর একটি প্রোসেস ব্যবহার করে যেটি সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব।

4. PeoplePerHour:

PeoplePerHour  একটি আলাদা ধরনের ওয়েবসাইট যেমনটা আপনারা Guru, Freelancer  বা Upwork এর ক্ষেত্রে দেখেছেন। এটির নাম অনুযায়ী কাজের ধরন । অর্থাত্ অন্যান্য সাইট এ আপনি যেমন নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারবেন এখিনে সেরকম নয়। এই সাইটে আপনাকে hour বেসিসে বিড করতে হবে। এবং তাই এটি একটি অন্য ধরনের ওয়েবসাইট

PeoplePerHour থেকে আপনি দুইভাবে কাজ করতে পারেন। একটি হলো কোনো প্রোফেসনাল আগে থেকেই তার রেইট দিয়ে রাখবে এবং সে অনুযায়ী ক্লায়েন্ট তাকে কাজ দিবে । আর একটি হলো ক্লায়েন্ট নিজেই কোনো কাজ দিবেন এবং আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সে কাজ করবেন। এই সাইটের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বিডিং এর কোনো ঝামেলা নেই। আপনি আপনার ইচ্ছে ভতো রেট দিবেন আর যার সেই রেট পছন্দ সে আপনাকে কাজ দিয়ে দিবে। এটি ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার দুজনের জন্যই একটি সুবিধে জনক সাইট। আপনি যদি টপ রেটেড প্রোফেশনালদের খুজে পেতে চান তাহলে এই সাইটটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য।

 

5. Speedlancer:

আপনি যদি কোনো তাড়াহুড়ো এর মধ্যে থাকেন অর্থাৎ আপনার যদি খুব তাড়াতাড়ি কোনো কাজ করে দিতে চান বা আপনার কাজ যদি তাড়াতাড়ি করা দরকার বলে মনে করেন তাহলে এই ওয়েবসাইট শুধু আপনার জন্য। এখানে আপনি সকল কাজ ঘন্টার মাঝেই করতে সক্ষম হবেন।

এবং অবশ্যই এখানে আপনার ফাস্ট সার্ভিস এর জন্য যথার্থ পে করা হবে। ধরুন আপনি যদি 600 ওয়ার্ডের কোনো কাজ করে দেন তাহলে আপনাকে 69 ডলার পে করা হবে যেটি অন্যান্য সাইটে আপনি স্বাভাবিক ভাবে মাত্র 20 থেকে 30 ডলার পেয়ে যাবেন।  তাই এই সাইটটি অত্যন্ত জনপ্রিয়  আপনি এখানে জব পোস্ট করা থেকে শুরু করে আপনার কাজ এর সমাপ্তি হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময় প্রায় মাত্র চার ঘন্টার মাঝেই সম্ভব।

6. Fiverr:

কাজ পোস্ট করে সেই কাজ থেকে যত কম রেটে সম্পূর্ণ করা সম্ভব সেটি অনেক ক্লায়েন্ট দেরই উদ্দেশ্য। তাই আপনি যদি এমন কিছু ভেবে থাকেন যে খুবই সামান্য রেইট এ আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করতে চান তাহলে এই ওয়েবসাইট আপনার জন্য । এখানে আপনি খুব কভ রেটে সম্পন্ন করতে সম্ভব হবেন। এই সাইট এর যাত্রার শুরু থেকেই  এটি সর্বনিম্ন 5 ডলার থেকে কাজ করতে পারবেন। এই সাইটটি আজ অনেক বছর থেকেই চালু হয়ে আসছে এবং এখানে আপনি 5 থেকে 10000 ডলারের কাজ পেতে পারেন। তাই আপনি যদি কম লেট এর কাজ করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য যথেষ্ট । কালক্রমে দীর্ঘদিন হলেও এই সাইট তার বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে।

এখনো এমন অনেকেই রয়েছে যারা 5 ডলার এর কাজ অনেক সহজেই করতে চায়। তাই এই সাইটে আপনি প্রচুর কম রেটের কাজ পাবেন। এই সাইটে এন কাজ এতই বেশি যে প্রায়  প্রত্যেক 5 সেকেন্ড এ একটি করে নতুন কাজ এর গিগ পাওয়া যায়। প্রায়  25  মিলিয়ন এরও অধিক কাজ এই সাইটে সম্পন্ন হয়েছে। এটি একদিকে ক্লায়েন্ট এর জন্য যেমন কম রেটে অনেক কাজ করে নিতে পারবে ঠিক তেমনি প্রফেশনালদের জন্য এটি প্রচুর কাজ এর ক্ষেত্র।

7. FlexJobs:

আপনি যদি আপনার সুবিধে মতো কাজ এর খোজ করেন তাহলে FlexJobs  আপনার জন্যই   কেননা এতে 50 টি ক্যাটাগরিতে কাজ খুজতে পারবেন। এমনকি এই কাজ গুলো করার জন্য আপনার নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি পার্ট টাইম কিংবা ফুল প্রফেশনালি যে কোনো কাজ ই যদি করতে চান তাহলে এ দুই রকমের কাজই আপনি করতে পারবেন। তাই বর্তমানে এই সাইটটি একটি অন্যতম সাধারণ ফ্রিল্যান্সিং সাইট।

এখানে যেহেতু 50 টিরও বেশি ক্যাটাগরিতে কাজ পাওয়া যায় তাই কাজের কোনো কমতি দেখতে পারবেন না। আর তাই এই সাইটে এসে আপনাকে কখনো হতাশ হতে হবে না। আপনি যদি অন্য সাইট থেকে সুবিধা করতে না পারেন তাহলে এই সাইট সম্পূর্ণ আপনার জন্য। কেননা এখান থেকে আপনি অনেক সহজেই আপনার সাথে যাবে এরকম কাজ খুজে নিতে পারবেন ।

8. TopCoder:

TopCoder যতটা না একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তার থেকে বেশি এটি উদ্যোক্তা সাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে আপনি আপনার স্বপ্ন গুলোকে একটি রূপ দিতে পারবেন  কিংবা আপনি যা কাজ করছেন তা নিয়ে নিজেই কোনো প্রকল্প নিতে পারবেন। আর এটি মূলত ডেভেলপারদের একটি ওয়েবসাইট। অন্যান্য সাইট থেকে এই সাইট এর পার্থক্য হলো এখানে আপনি ক্লায়েন্ট হিসেবে কোনো প্রজেক্ট দিলে আপনি একজন TopCoder এর ইমপ্লয়ি দ্বারা গাইড হবেন যাকে তারা বলে কো-পাইলট।

আপনি যদি এই সাইটে কোনো কাজ আপলোড করেন তাহলে আপনার কো- পাইলট সেগুলোকে একটি চ্যালেঞ্জ এর সিরিজ রূপে প্রকাশ করবে। এরপর সেই ওয়েব সাইট এর ইউজাররা সেই চ্যালেঞ্জ গুলো কমপ্লিট করবে  আর আপনি যেটি আপনার ভালো লাগবে সেই কমপ্লিশন টি নিয়ে নিবেন। এর মানে এখানে আপনি একটি কাজ এর জন্য অনেক গুলো সাবমিশন পাবেন। যার ফলে তুলনামূলক ভালো কাজ এর ফলাফল দেখতে পারবেন । এখানে প্রায় সকল প্রকার ডেভেলপমেন্ট যেমন app development, web development সহ যে কোনো কাজ পেতে পারেন।

9. Codeable:

ওয়ার্ডপ্রেস হলো প্রত্যেক ওয়েব সাইট এর ব্যাকবোন। তাই এই ওয়ার্ড প্রেস ইন্টারনেট এর 25% এর ও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে।  আপনি যত ভালো ওয়েব সাইটের ওয়ার্ড প্রেস এর কাজ করতে পারবেন আপনার ওয়েব সাইট তত ডিমান্ড পাবে।তবে আজ এই সার্ভিসটি দেয়া অনেকাংশে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। আর Codeable মূলত এই সমস্যার সমাধান এর চেষ্টা করে থাকে।

Codeable এ শুধু wordpress developer দের জন্য এক অনন্য সাইট। এখানে আপনি আপনার কাজ পোস্ট করবেন। এবং অন্য দিকে যেসব দক্ষ wordpress developer রয়েছে তারা আপনার কাজ বাছাই করবে এবং তা পুরোটা সম্পূর্ণ করবে। এটি যেমন ক্লায়েন্ট দের ওয়েবসাইটের মেইনটেন্যান্স এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট। ঠিক তেমনি প্রফেশনালদের জন্য একটি যথেষ্ট পছন্দনীয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট। তবে এটি শুধু wordpress developer দের জন্য কাজ করে থাকে।

10. Yeeply:

লুইস পিকুরেলি এবং হেক্টর বাদাল কর্তৃক 2013 সালে ট্রেডিশনাল কিছু ওয়েব সাইট এর সমস্যা দূরীকরণ করার জন্য এই সাইটটি পথ চলা শুরু করে। ডেভেলপমেন্ট ছাড়া কখনোই কোনো অ্যাপ বা ওয়েবসাইট দীর্ঘদিন চালানো সম্ভব না।  তাই সেই ডেভেলপমেন্ট যদি যথার্থ না হয়ে কোনো ক্রুটি পূর্ণ হয় তাহলে অ্যাপটি কখনো চালানো সম্ভব হবে না।

এর জন্য Yeeply আপনাদের সামনে চলে এসেছে। এখানে আপনি যে কোনো কাজ পোস্ট করলে সেখানে  app developer রা তাদের টিম নিয়ে সেটি সম্পাদনের জন্য এগিয়ে আসবে। এবং আপনার যে টার্মস পছন্দ হবে সেই টিমকে আপনার নির্দিষ্ট ডেভেলপমেন্ট এর কাজে নিয়োজিত করতে পারবেন। আর এর জন্য আপনার দেয়া প্রজেক্ট এর আন্ডারে আরো একজন থাকবে যে আপনার প্রজেক্ট টি সম্পন্ন হওয়ার পিছনে খেয়াল রাখবে। এভাবে আপনি আপনার app development , web development এর কাজ সম্পন্ন  করতে পারবেন।

তাই, আপনি যদি নিজের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার কথা ভাবছেন, তাহলে ওপরে দেয়া ওয়েবসাইট গুলিতে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলিতে গিয়ে কি করবেন ?

আপনি কাজ করতে গেলে হয়ত সঠিক পদ্ধতি না জেনে আশাতীত ফলাফল নাওপেতে পারেন। এক্ষেত্রে সঠিক জ্ঞান এবং পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি। তাই কীভাবে এই ক্যারিয়ার কে আপনি আগায় নিতে পারবন  তা নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো:

আপনার পারদর্শিতার বিষয় কে এগিয়ে রাখুন:

আপনি এতগুলো সেক্টর দেখে হয়ত বুঝে উঠতে পারবেন না যে কোথা থেকে আপনি কাজ শুরু করবেন। কিংবা আপনি হয়ত অতিরিক্ত লাভ এর আশায় সবগুলো এর পিছনে লেগে যাবেন। তবে এটি কখনোই ঠিক না।

আপনি যে কোনো একটি বিষয় কে স্থির করুন। যে বিষয়ে আপনি বেশি পারদর্শী প্রথমে সে বিষয়টি তে ফোকাস করুন  এবং আস্তে আস্তে আপনি অন্য বিষয়গুলোতে ফোকাস করতে পারেন । তবে প্রথমে অবশ্যই আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পথে এগোতে হবে।

প্রোফাইল তৈরি করুন:

একটি মানসম্পন্ন প্রোফাইল তৈরি করুন। এই প্রোফাইলটি অনেকটা আপনার পোর্টফোলিও হিসেবে কাজ করবে। আপনি যখন কাজ করতৃ যাবেন তখন ক্লায়েন্ট রা আপনার কাজের স্যামপল দেখতে চাবেন। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার আপনাকে আপনার প্রোফাইল দেখে বিবেচনা করবে। আপনার প্রোফাইল যত উন্নত হবে আপনি তত বেশি সুবিধা পাবেন।

কাজ খুজুন ও বিড করুন:

আপনি যখন একটি শক্তিশালী প্রোফাইল তৈরিতে সক্ষম হবেন তারপরই আপনার উচিত আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ খোজা। যেই কাজগুলো আপনা কোয়ালিটি এর সাথে যাবে সেগুলোতে বিড করুন। একটি দুটিতে বিড করে বসে থাকবেন না। চেষ্টা করবেন বেশি বেশি বিভ করার। এক পর্যায়ে আপনি নিশ্চয়ই আপনার কাজ কে হাতিয়ে পাবেন।

কাজ সম্পন্ন করুন:

আপনি কাজ খুজে পেলে বিড করুন এবং ক্লায়েন্ট যদি আপনার বিডে খুশি হয়ে যায় তাহলে আপনি তাদেরকে কাজটি সঠিক সময়ে ডেলিভারি করুন। কেননা আপনি যদি কাজটি ফেলে রাখেন কিংবা সঠিক সময়ে ডেলিভারি করতে না পারেন তাহলে আপনার রেটিংস কমে যাবে। এবং আপনি  যদি ক্লায়েন্ট এর সাথে ভালো ব্যবহার করে তাদের মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার জন্য বিষয়টি মোটেও ভালো হবে না। তাই আপনি যথাসময়ে কাজের ডেলিভারি দিন।

পেইড হন এবং ফাইভ স্টার রেটিংস নিন:

পরিশেষে আপনি যগন আপনার ক্লায়েন্টকে কাজের সরবরাহ করবেন আপনার ক্লায়েন্ট এর কাছে পেমেন্ট নিন। এবং তাকে আপনার প্রোফাইলে রেটিংস এর জন্য অনুরোধ করুন। স্বাভাবিক ভাবে সকল ক্লায়েন্ট কাজ শেষে অবশ্যই নিজে থেকে রেটিংস দেয়। তবুও ভদ্রতা সাপেক্ষে তাদের সাথে প্রীতি মূলক ব্যবহার দেখানো ফ্রিল্যান্সিং এর একটি অন্য রকম দিক।

আপনি যদি সঠিক জ্ঞান ,স্কিল এবং  পদ্ধতি অনুসরণ করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করেন তাহলে আপনাকে কখনো হতাশ হতে হবে না। অনেকেই ভাবে যে এখানে কাজ পাওয়া বেশ শক্ত। তবে সে ধারনা মোটেও সঠিক নয় । কিন্তু আপনি যদি ভালো স্কিল এর অধিকারী না হন তবে একাজ আপনার জন্য একটু কষ্ট সাধ্য হয়ে  উঠবে।

তাই আজ থেকে আপনিও নিজের স্কিল নিয়ে কাজ করুন। এবং নিজেকে একজন দক্ষ রূপে তৈরি করুন। এবং পরবর্তী তে ফ্রিল্যান্সিং জগতে অংশ নিয়ে আপনিও হয়ে উঠুন একজন আদর্শ ফ্রিল্যান্সার। যা আপনার পরিচয় কে আরো বর্ধিত করতে সহায়তা করবে।

ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যাবে ?

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করার কোনো সীমা নেই। হে, এটাও এক রকমের ব্যবসা (business), যেখানে আপনার কাছে যত বেশি কাজ আসবে এবং যত বেশি কাজ আপনি করে দিতে পারবেন, ততটাই বেশি আপনার ইনকাম হবে।

PayPal এর একটি survey বা report হিসেবে, ২৩ % ভারতীয় ফ্রিল্যান্সাররা ৬০ লক্ষ টাকা প্রত্যেক বছরে আয় করছে।

এবং, বাকি ২৩% রা ২.৫ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার ভেতরে টাকা আয় করছেন। তাছাড়া, বাকি ৫৪ % ফ্রিল্যান্সাররা ২.৫ লক্ষ থেকেও কম টাকা বছরে আয় করছেন।

তাই, সোজা ভাবে বললে, ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার বানালে লাভ আছে এবং এর থেকে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। কিন্তু, আপনাকে ভরসা করে কতজন কাজ দিচ্ছে এবং কতটা কাজ আপনি সম্পূর্ণ করতে পারছেন, সেটার ওপরে আপনার আয় নির্ভর করবে।

আজ, অনলাইন এবং ইন্টারনেটের দুনিয়াতে সুযোগ অনেক রয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোকেরা, বিভিন্ন ছোট ছোট কাজের জন্য, একজন কর্মচারী (employee) রেখে তাকে মাসে মাসে টাকা দেয়ার থেকে, একজন freelancer কে দিয়ে সেই কাজ অনেক কম টাকায় সহজে করিয়ে নিচ্ছেন।

কোনো বিশেষ কাজে, আপনার যত বেশি অভিজ্ঞতা (experience) থাকবে, ততটাই বেশি টাকা আপনি প্রত্যেক কাজের জন্য চার্জ (charge) করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সার হতে যা যা প্রয়োজন:

ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে কোন কোন দক্ষতা কাজে লাগবে, সেই দক্ষতা সম্পর্কে জানা এবং দক্ষতাগুলো অর্জন করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ! কারণ, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান আর যদি না জানেন যে ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে কোন দক্ষতা কাজে লাগবে, তাহলে আপনার কাজ শুরু করাটা বেশ কঠিন হবে। আর আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করেই আপনাকে কাজ দেওয়া হয়।

ফ্রিল্যান্সার হতে যা যা প্রয়োজন
কম্পিউটার চালানোর বেসিক স্কিল
  • কম্পিউটার অন অফ করতে পারা
  • যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল এবং আনইনস্টল করতে পারা
  • কম্পিউটারে লেখালেখির কাজ করতে পারা
  • MS Word, MS Excel, MS PowerPoint ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় টুলসগুলোর ব্যবহার করতে পারা।
  • ফাইল ট্রান্সফার করতে পারা।
  • কম্পিউটারের বেসিক ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে জানা, ইত্যাদি।
ইন্টারনেটইন্টারনেট কানেকশনের সাথে পরিচিত থাকা এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারা।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতাফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে আপনাকে বাইরের দেশের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা এবং কাজ বুঝিয়ে দেওয়া লাগবে, অনেক বাহিরের ব্লগ পড়তে হবে, অনেক মার্কেটপ্লেসে জয়েন থাকতে হবে। তাই আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
দক্ষতা অর্জনফ্রিল্যান্সিং করার আগে আপনি কোন বিষয়ে (গ্রাফিক ডিজাইন, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি) দক্ষ, তা ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা না থাকলে ফ্রিল্যান্স কাজ করা বেশ কঠিন।
আত্মবিশ্বাসআপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কোনো কাজ নেওয়ার সময় অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে আপনি কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারবেন কি না। এ জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজের দক্ষতা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে যে আপনি তার কাজের জন্য উপযুক্ত
প্রবলেম সলভিং স্কিলকাজ করার সময় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে অনলাইনে দ্রুত এবং সঠিকভাবে তথ্য খোঁজার কৌশল জানতে হবে। কারণ, ফ্রিল্যান্স কাজ করতে গেলে মাঝেমধ্যেই বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমাধান করা সম্ভব।
ফ্লেক্সিবিলিটিক্লায়েন্টের সমস্যা সমাধানের মনমানসিকতা থাকতে হবে। কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ জমা দেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, ক্লায়েন্টের চাহিদামতো একাধিকবার জমা দেওয়া কাজে পরিবর্তন আনার মানসিকতাও থাকতে হবে। বিরক্তবোধ করা যাবে না, এতে বাজে রেটিং পেতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার (freelancing career) গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু জেনে গেলেন। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, ফ্রিল্যান্সিং করে কত আয় করা যায়?

কোন ফ্রিল্যান্সিং কোর্স শিখতে হবে ?

সোজা ভাবে বললে, ফ্রিল্যান্স করার জন্য বা শেখার জন্য কোনো কোর্স (course) করার প্রয়োজন আমাদের হয়না।

হে, কিছু সাধারণ জ্ঞান যেমন, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো, কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজ খুঁজবো এবং প্রথমেই আমাদের কি কি করতে হবে, এগুলির ব্যাপারে জেনে নিতে হবে। এবং, এগুলির ব্যাপারে সবটাই আমি ওপরে বলেছি।

এখন, ফ্রিল্যান্সিং কোর্স বলেতো বিশেষ কিছুনা নেই, যদিও আপনি freelancing এর কাজ করার জন্য, কিছু বিশেষ কোর্স করতে পারেন, এবং যেগুলি শেখার পর আপনারা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করতে পারবেন। যেমন –

  •  Translating course : আজকাল বিভিন্ন ভাষা জানলে আপনারা translator এর কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে, ভাষা ট্রান্সলেট করার দক্ষতা থাকাটা আপনার জন্য অনেক কাজ এনেদিতে পারে।
  • Graphic design : আজকাল, মার্কেটিং, লোগো বানানো এবং প্রায় অনেক কাজেই গ্রাফিক ডিসাইনার দেড় প্রয়োজন হয়। তাই, এই কোর্স আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে।
  • Website বানানো : এই ব্যাপারে আমি আপনাদের না বললেও চলবে। কারণ, আজকাল ওয়েবসাইট বানানোর কাজ জানাটা কতটা লাভজনক সেটা আমরা সবাই জানি।
  • Article writing : আপনার যদি লেখার অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা রয়েছে বা আপনি আর্টিকেল লেখার একটি কোর্স করে, ভালো ভাবে এই শিল্প (art) শিখতে পারেন, তাহলে বিভিন্ন ব্লগ (blog) বা কোম্পানির ওয়েবসাইটের জন্য লিখতে পারবেন।
  • Video editing : বিভিন্ন কোম্পানি বা অনলাইন marketer রা নিজের ব্র্যান্ড এর জন্য ভিডিও এডিটিং কোরান। তাই, এই ব্যাপারে কোর্স করলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনেক কাজ পেতে পারবেন।
  •  Coding (PHP/Java/Css) : আজকাল, web development বা application building এর কাজে বিভিন্ন coding language এর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে, আপনার যদি কোনো বিশেষ coding language এর জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে, তাহলে এর সাথে জড়িত অনেক কাজ পেয়ে যাবেন।

এগুলি ছাড়াও, অনেক আরো কোর্স রয়েছে, যেগুলি করে নিজেকে একজন এক্সপার্ট বানিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়াতে আসতে পারবেন।

আপনার মাঝে এরকম প্রশ্ন উঠতে পারে যে কীভাবে আপনি ফ্রিল্যানসিং ক্যারিয়ার তৈরি করবেন। আপনি এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন। আর আমরা আপনার সামনে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি যেগুলো একজন স্টার্টার হিসেবে আপনি ফলো করতে পারেন:-

1. আপনার লক্ষ্যগুলি নির্দিষ্ট করুন ।
2. একটি লাভজনক টপিক খুঁজে নিবেন।
3. আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী ক্লায়েন্ট সনাক্ত করবেন।
4. আপনার সার্ভিস এর জন্য লাভজনক দাম নির্ধারণ করবেন।
5. একটি উচ্চ-মানের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করবেন ।
6. আপনি কী কাজ করতে পারেন তার দৃষ্টান্ত মূলক উদাহরণ তৈরি করুন (যেমন আপনার পোর্টফোলিও সাইট) ।
7. ভালো করে ভেবে নিয়ে আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ শুরু করবেন।
8. আপনার প্রোডাক্টে যার সাথে কাজ করবেন সেই ক্লায়েন্টদের কে তুলে ধরুন ।
9. কীভাবে নিজেকে ক্লায়েন্টের সামনে তুলে ধরবেন তা ঠিক করে নিন।
10. ফ্রিল্যান্স ব্যবসায়ের সাথে আপনার দিনের কাজগুলি মিশিয়ে ফেলবেন না।

এগুলো একজন বিগিনার হিসেবে আপনি ফলো করতে পারেন। এবং আশা করা যায় আপনি সফল হতে পারবেন।

সর্বপরি আমাদের পরামর্শঃ

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয় করতে চান তাহলে পূর্ব পরিকল্পনা করাটা খুবই জরুরী। পরিকল্পনা করুন, যে কোন কাজের দক্ষতা অর্জন করুন তার পর কানে নেমে পড়ুন অবশ্যই সফল হবেন।

আমাদের সম্পর্কে কোন অভিযোগ বা কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।