ফ্যান রেগুলেটর – গরমকালে বিদ্যুৎ চালিত ফ্যান/পাখা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। আর এই যন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় রেগুলেটর দিয়ে। অর্থাৎ, ফ্যানের সাথে রেগুলেটরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রেগুলেটর না থাকলে আপনার ফ্যানের জোর/গতি কম-বেশি করতে পারবেন না। আর আমাদের প্রায় সকলেরই একটা কৌতূহল আছে যে, রেগুলেটর দিয়ে ফ্যানের গতি কমানো হলে কি বিদ্যুৎ খরচ কম হবে? নাকি জোরে চালালে যে খরচ হয়, গতি কমালেও বিদ্যুৎ খরচ একই হয়? আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব এই বিষয়টা নিয়ে। তাহলে চলুন, শুরু করি।
যদি কোথাও প্রশ্ন করা হয়, “ফ্যানের গতি কমালে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকে না কি বিদ্যুৎ খরচ কম হয়?” তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় দুই রকম। কেউ বলবে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকবে। আবার কেউ বলবে বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে। তারা দুজনেই মোটামুটি সঠিক উত্তর দিয়েছে। কী? কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন, তাইতো? আসলে বিদ্যুৎ খরচ কমবে কি কমবে না, সেটা নির্ভর করবে কী ধরনের রেগুলেটর ব্যবহার করছেন তার ওপর। রেগুলেটর সাধারণত দুই প্রকার।
(১) ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর (রেজিস্টর বেসড্ রেগুলেটর)।
(২) ইলেকট্রনিক রেগুলেটর।
আপনি যদি ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর ব্যবহার করেন, তাহলে গতি কমালে বা বাড়ালে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকবে। আবার আপনি যদি ইলেকট্রনিক রেগুলেটর ব্যবহার করেন, তাহলে গতি কমালে বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে, গতি বাড়ালে বিদ্যুৎ বেশি খরচ হবে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক রেগুলেটর কীভাবে চিনবেন।
ইলেকট্রিক্যালল রেগুলেটর: এটা মুলত ওয়্যারউড রেজিস্টর বেসড রেগুলেটর। যে সকল বড়ো বড়ো রেগুলেটর আগে ব্যবহৃত হতো, যেগুলো সুইচ বোর্ডের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে এবং খুব গরম হয়। যদি খুলে দেখতে পারেন তাহলে দেখবেন, একটি লোহার কোর এর গায়ে প্রচুর পরিমাণে তামার তার পেঁচিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ইলেকট্রনিকক রেগুলেটর: এটা দেখতে অত্যন্ত ছোটো সাইজের হয়। প্রায় একটা সুইচ এর সমান। সুইচবোর্ডে একটা সুইচ এর সমান জায়গা দখল করে। খুব সামান্য গরম হয়। যদি খুলে দেখতে পারেন, তাহলে দেখবেন, এটা একটি ভ্যারিয়েবল রেজিস্টার, একটা বা কয়েকটা ফিক্সড রেজিস্টার, ট্রায়াক ও ডায়াক দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটা সার্কিট। এ
এবার আসি এদের কার্যপ্রণালিতে।
ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর:
ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর তৈরি করা হয় মূলত আয়রন কোরের গায়ে তামার তার পেঁচিয়ে। বিদ্যুৎ এই তারের ভেতর দিয়ে অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে ফ্যান পূর্ণ শক্তি পায় না এবং ফ্যানের রোটেশন/গতি কমে যায়। এতে মূল বিদ্যুৎ খরচ একই থাকছে। অর্থাৎ, ফ্যানের গতি কমলেও বিদ্যুৎ খরচ কমছে না। কারণ, রেগুলেটর কিছু বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে অপচয় করে দিচ্ছে, ফলে ফ্যান কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং আস্তে ঘুরছে।
ইলেকট্রনিক রেগুলেটর:
ইলেকট্রনিক রেগুলেটর তৈরি হয় সাধারণত একটি ভ্যারিয়েবল রেজিস্টার, একটা বা কয়েকটা ফিক্সড রেজিস্টার, ট্রায়াক ও ক্যাপাসিটর দিয়ে। এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে ট্রায়াক। ট্রায়াকের সাথে ফিক্সড রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ও একটা ভেরিয়েবল রেজিস্টার দিয়ে একটা থাইরিস্টর জাতীয় ইলেকট্রনিক সুইচিং ডিভাইস তৈরি করা হয়। এটা মূলত খুব দ্রুত সুইচিং অর্থাৎ, সংযোগ অন-অফ করার মাধ্যমে ফ্যানের গতি কমিয়ে দেয়। আপনার নির্ধারণ করা পরিমাণে বিদ্যুৎ সাপ্লাই করে এবং রেগুলেটর নিজে খুব সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ অপচয় করে। তাতে করে ফ্যানের গতি কমালে বিদ্যুৎ খরচও কমে যায়।
১ রিভিউ